চট্টগ্রাম : গত দুই সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকে একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। অন্তঃকোন্দল, নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্ব ও সংস্কারপন্থীসহ নানা ইস্যুতে কাবু চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। এর মাঝে চলছে নেতৃত্বের লড়াই। শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতারা আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে নিজেদের হাতে নেতৃত্ব কবজায় নিতে ব্যস্ত।
এই অবস্থায় চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি, নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ানকে সহ সভাপতি, নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের চট্টগ্রাম নগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে শনিবার বিকেলে।
কমিটি ঘোষণার পর উৎসাহ-উদ্দীপনার পরিবর্তে হতাশা হতাশা নেমে এসেছে নেতাকর্মীদের মাঝে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপিকে সংগঠিত করার পরিবর্তে সংকুচিত করবে এই কমিটি, উসকে দেবে গ্রুপিংয়ের রাজনীতি।
নতুন কমিটিতে বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রমোশন হলেও ত্যাগী নেতা আবু সুফিয়ান রয়ে গেছেন আগের জায়গায়। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবুল হাশেম বক্করের নাম ঘোষণায় বেশিরভাগ নেতাকর্মী বিস্মিত। নগর বিএনপি’র সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে স্থায়ী কমিটির সদস্য মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। কারণ নগর কমিটির সভাপতি হিসেবে সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনও ছিলেন। তাদের ডিঙ্গিয়ে সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করায় এই দুই নেতার কর্মী-সমর্থকদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ, হতাশা।
চট্টগ্রাম বিএনপির নেতৃত্ব কার্যত কয়েক ধারায় বিভক্ত। সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের রয়েছে একটি গ্রুপ, সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের রয়েছে আরেকটি গ্রুপ। সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বর্তমান ঘোষিত কমিটির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনেরও আলাদা আলাদা গ্রুপ রয়েছে।
সর্বশেষ ২০১০ সালের জানুয়ারিতে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সভাপতি এবং ডা. শাহাদাত হেসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নগর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। বাকি তিনজন হলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি দস্তগীর চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান ও শামসুল ইসলাম চৌধুরী। গত ২০১১ সালে দস্তগীর চৌধুরী মারা গেলে চার সদস্য দিয়েই চলে আসছিল নগর বিএনপির কার্যক্রম। দস্তগীর চৌধুরীর মৃত্যুর পর সিনিয়র সহ-সভাপতি হওয়া আবু সুফিয়ান আগের পদেই বহাল থাকলেন। এ নিয়ে সুফিয়ান সমর্থকদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা। তারা আশা করেছিলেন, আবু সুফিয়ান ও ডা. শাহাদাত হোসেন যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাবেন। কিন্তু সে হিসেব মিলেনি!
অভিযোগ রয়েছে, অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতার জন্ম দিয়েছেন বক্কর। তার এসব কর্মকাণ্ডে ‘সন্তুষ্ট’ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা তাকে নতুন এ পদে বসিয়েছেন। বক্করের এ পদ প্রাপ্তিতে অসন্তোষ বিরাজ করছে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও।
চান্দগাঁও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন লিপু বলেন, গত গত ১৯ মার্চ ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে চট্টগ্রামের নেতাদের উপস্থিতিতে আবু সুফিয়ানকে প্রেসিডেন্ট সম্বোধন করে ডেকেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা সেটাও জানতে চেয়েছিলেন তিনি। এ সিদ্ধান্তের কথা চট্টগ্রামের সব নেতাদেরও জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। গতকাল (শুক্রবার) কথা বলার সময় সুফিয়ান ভাইও বলেছেন, তাকেই মহানগর কমিটির সভাপতি হিসেবে দল ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। কিন্তু শনিবার দেখলাম সুফিয়ান ভাই আগের জায়গায় রয়ে গেলেন।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি করেও কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পাওয়া যায়। আর ক্লিন ইমেজের সুফিয়ান ভাইকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যেতে পারবো না। তাই এ নিয়ে কোনো ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের কোন সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি।
বায়েজিদ বোস্তামি থানা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, নতুন কমিটি দেখে আমরা আশাহত হয়েছি। কল্পনাও করিনি এ রকম একটা কমিটি দেওয়া হবে। কথা ছিল- সুফিয়ান ভাই সভাপতি ও শাহাদাত ভাই সাধারণ সম্পাদক হবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুফিয়ান ভাইকে মূল্যায়ন করা হলো না। কীভাবে এসব হল, কেন হল বুঝতে পারছি না।