ইয়াবার সাংকেতিক নাম এখন ‘কেজি’

‘হ্যালো! আমার লাগবে।

কত কেজি?

বেশি না, আজ সাত কেজি হলে চলবে।

কিছুক্ষণ পর আরেকটি ফোন আসে। ফোনটি ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আমি জামালখান আসছি। আমার তিন কেজি লাগবে।’

ভাবছেন এসব কী? কিছুই মাথায় আসছে না! কীসের কথা বলা হচ্ছে আর কেজিই বা কী! এগুলো খুচরা ইয়াবাক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মোবাইলে কথোপকথনের সংলাপ।

সম্প্রতি কোতোয়ালী থানা পুলিশের ফাঁদে এমন একটি ইয়াবা বেচা-কেনা চক্রের তিন সদস্য গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের মোবাইলের কল রেকর্ড পর্যালোচনার পর এরকম সংলাপ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।

দেশব্যাপী চলমান মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীরা কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও থেমে নেই ইয়াবার বিকিকিনি। খুচরা ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে অব্যাহত রেখেছে তাদের বিকিকিনি। মরণনেশা ইয়াবা বেচাকেনায় ক্রেতা-বিক্রেতারা বিভিন্ন সাংকেতিক নাম ব্যবহারের ধারাবাহিকতায় এবার তারা ইয়াবার নতুন সাংকেতিক নাম দিয়েছে ‘কেজি’।

এর আগে সুগন্ধি হওয়ার কারণে অনেকে এই মরণনেশা ইয়াবাকে ক্যান্ডি বলে ডাকতো। তবে অনেকে চকলেট, বাবা, গোলাপ, সুপার, চম্পা, চামেলী, আর-৭০, আর-৭৩ নামেও ডাকতো।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘খুচরা ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে আর আশপাশকে বুঝতে না দিতেই মূলত বিভিন্ন সময়ে ইয়াবার সাংকেতিক নাম ব্যবহার করে থাকে। এরকম সাংকেতিক নামের ধারাবাহিকতায় এবার তারা ইয়াবাকে ডাকছে কেজি নামে। কত পিসও বলছে না তারা। বলা হচ্ছে ৫ কেজি ১০ কেজি। স্বাভাবিকভাবে আশপাশের মানুষের বোঝার উপায়ও থাকে না এসব কিসের অর্ডার করছে আর কিসের কথা বলছে। সাম্প্রতিক একটি চক্রকে ধরার পর নতুন সাংকেতিক নামটির কথা জানতে পেরেছি।’

তবে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা যতই কৌশল অবলম্বন করুক না কেন পুলিশের হাতে তাদের গ্রেফতার হতেই হবে বলে জানান ওসি মহসীন।

ইয়াবা কী : মেথামফিটামিন নামক এক ধরনের স্নায়ু উত্তেজক মাদকের সঙ্গে মরফিন কিংবা সিডেটিভ বা ট্র্যাংকুইলাইজার জাতীয় মাদক মিশিয়ে তৈরি হয় ককটেল জাতীয় এই ট্যাবলেট। থাই শব্দ ইয়ার, যার অর্থ উত্তেজক, আর বাহ, যার অর্থ ওষুধ। এই দুটি শব্দের সংযোজনে এর নামকরণ করা হয় ইয়াবা। এর রং গোলাপি, লালচে, কমলা, সবুজাভ এবং সাদাও হয়ে থাকে। আবার কোথাও কোথাও পাউডার আকারে ইয়াবা মিলছে।

কোথা থেকে আসে : বাংলাদেশে যে ইয়াবা পাওয়া যায় তার বেশির ভাগ আসছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চীন থেকে। তবে সবচেয়ে বেশি আসছে মিয়ানমার থেকে। টেকনাফের নাফ নদী পার হলেই ওপারে মিয়ানমারের ম-ু, আকিয়াব আর চুশিংচং অবস্থিত ইয়াবার কারখানা থেকেই এসব ইয়াবা বাংলাদেশে আসে।

সেবনকারী কারা : বিদেশি অপসংস্কৃতির অনুসরণকারী তথাকথিত আধুনিক, উচ্চবিত্ত ও অতি উচ্চবিত্ত পরিবারের অভিভাবকদের বখে যাওয়া ছেলেমেয়েরাই মূলত ইয়াবার প্রধান ক্রেতা। তবে ইয়াবার দাম কিছুটা কমে যাওয়া আর ফেনসিডিলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ পরিবারের অনেক ছেলেমেয়ে এখন ইয়াবা আসক্তিতে ঢুকে পড়েছে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : প্রথমদিকে ইয়াবা যৌনউত্তেজক বড়ি হিসাবে বাজারে পরিচিত ছিলো। কিন্তু দীর্ঘদিন সেবনের ফলে যৌনক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। যুক্তরাজ্যের ড্রাগ ইনফরমেশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ইয়াবা ট্যাবলেটটি খেলে সামযয়িভাবে উদ্দীপনা বেড়ে যায়। কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হেরোইনের চেয়েও ভয়াবহ। নিয়মিত ইয়াবা সেবন করলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, নিদ্রাহীনতা, চুনি, ক্ষুধামন্দা এবং মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা যেতে পারে। ইয়াবাগ্রহণের ফলে ফুসফুস, কিডনি সমস্যা ছাড়াও অনিয়মিত এবং দ্রুতগতির হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত হারে ইয়াবা গ্রহণ হাইপারথার্মিয়া বা উচ্চ শারীরিক তাপমাত্রার কারণ হতে পারে। অভ্যস্ততার পর হঠাৎ ইয়াবার অভাবে সৃষ্টি হয় আত্মহত্যার প্রবণতা এবং হতাশা।

একুশে/এডি