সীতাকুণ্ডে কয়েক হাজার সরকারি গাছ কেটে শিপইয়ার্ড স্থাপনের চেষ্টা

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজদারহাট ঝুনা মার্কেট এলাকা। সেখানে রয়েছে বন বিভাগের বিশাল কেওড়া বন। এই বনে ১০ হাজারের বেশি গাছ আছে। উপকূলের এসব গাছ রক্ষার জন্য সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও এ জায়গায় একটি শিপব্রেকিং ইয়ার্ড স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন সীতাকুণ্ডের শিপব্রেকিং ইয়ার্ড ব্যবসায়ী এম.এ কাসেম রাজা।

তিনি সলিমপুর মৌজার এক নাম্বার খাস খতিয়ানের ২১ দশমিক ৫৭ একর জমি তার মালিকানাধীন বিবিসি ষ্টিলের নামে লিজের জন্য জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখায় আবেদন করেছেন। আবেদন করা ওই জমিতে কমপক্ষে ৫ হাজার কেওড়া গাছ আছে বলে বন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে এম.এ কাসেম রাজা এর আবেদনের প্রেক্ষিতে উক্ত জায়গাটির বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে উপজেলা ভূমি অফিসকে গত ৫ জুলাই জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা নির্দেশ দেয়। এ প্রেক্ষিতে সীতাকুণ্ড ভূমি অফিসের একজন সার্ভেয়ার তদন্ত করে সম্প্রতি সীতাকুণ্ডের সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন। এতে বন বিভাগের হাজার হাজার গাছের তথ্য গোপন করে জায়গাটি বালুচর উল্লেখ করেছেন তিনি। এ ছাড়া বিবিসি ষ্টিলকে লিজ প্রদানের জন্য তিনি সুপারিশও করা হয় ওই তদন্ত প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনটি এখন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জমা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের একটি কপি একুশে পত্রিকার হাতে এসেছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে খাস খতিয়ানের ২১ দশমিক ৫৭ একর জমি লিজ প্রদানের বিষয়টি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করে কেওড়া বন লিজ নিতে যাচ্ছেন এম.এ কাসেম রাজা। এ লিজের আবেদন মঞ্জুর হলে সেখানে শিপব্রেকিং ইয়ার্ড স্থাপনের কাজ শুরু হবে। আর তাতে ওই বনে থাকা পাঁচ হাজারেরও বেশি সরকারি গাছ উজাড় করা হবে।

উক্ত জায়গায় শিপইয়ার্ড করার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই সেখানে একটি-দুটি করে রাতের আঁধারে গাছ কাটা শুরু হয়ে গেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। একসাথে সব গাছ কাটলে ব্যাপক তোলপাড় হতে পারে ভেবে এম.এ কাসেম রাজা স্থানীয় কিছু গরীব মানুষকে ব্যবহার করে তিনি গাছগুলো কেটে সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। লিজের অনুমোদন পেলে সবগাছই শেষ পর্যন্ত কাটা পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এতে উপকূলে পরিবেশ হুমকিতে পড়বে।

ফৌজদারহাট ঝুনা মার্কেট এলাকার একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বন বিভাগ ও ভূমি অফিসসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে কাসেম রাজা কেওড়া বন লিজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কয়েক মাস আগে থেকে একটি-দুটি করে গাছ কাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, লিজের অনুমোদন পেলে সেখানে থাকা কয়েক হাজার গাছ কাটতে আর কোন বাধা থাকবে না। গাছ কেটে বনটি উজাড় হলে ঝড়-জলোচ্ছাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে পড়বো আমরা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এম.এ কাসেম রাজা সেখানে শিপব্রেকিং ইয়ার্ড স্থাপনের চেষ্টার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। বিবিসি ষ্টিলের নামে লিজ নিতে জেলা প্রশাসনের কাছে তার আবেদনের বিষয়টি তুলে ধরার পরও তিনি বলেন, আমি কোন শিপব্রেকিং ইয়ার্ড করছি না। সেখানে কোন সাইনবোর্ড নেই। কোন অফিসও নেই।

তবে ওই এলাকায় ৩০ গন্ডা জমি কিনেছেন জানিয়ে কাসেম রাজা বলেন, পরে ওই জমিতে ঘর-বাড়ি করলেও করতে পারি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে কী করবো, কোন পরিকল্পনা নেই আমার।

সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, উপকূলের সরকারি গাছ কেটে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই।