চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে ম্যাক্স হাসপাতাল ও সিএসসিআর-এ র্যাবের অভিযানের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসা রোগী আর তাদের স্বজনরা। রোববার দুপুরে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সংগঠন ‘প্রাইভেট হসপিটাল অ্যান্ড ল্যাব ওনারস অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম’ এ ঘোষণা দেয়। আর এতে সমর্থন দেয় ডাক্তারদের সংগঠন বিএমএ।
এদিকে হঠাৎ করেই প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। এঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ক্যাব। আর রোগীকে জিম্মী করে এ স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
রোববার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে চকবাজার পপুলার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, লায়লা বেগম ও রশীদ আহমেদ আরেকজন তাদের সম বয়সী বয়স্ক নারী নিয়ে গ্যাস্ট্রো লিভারের চিকিৎসা নিতে আসছেন রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা এলাকা থেকে। সকালে যেই ডাক্তারের সিরিয়াল নাম্বার দিয়েছেন সেই ডাক্তারের ব্যক্তিগত সহকারী তাদের জানিয়ে দিয়েছেন আজ থেকে কোনো চিকিৎসা করা হবে না। এসময় তারা অনেক দূর থেকে আসার কথা জানালেও তাদের হাতে হাসপাতাল বন্ধের একটি নোটিশ ধরিয়ে দিয়ে কর্তব্যরত দারোয়ান চলে যেতে বলেন।
এ প্রতিবেদককে পঞ্চাশোর্ধ্ব লায়লা বেগম বলেন, ‘এটা কী ধরণের ডাক্তারি? আওয়ামী লীগ বিএনপির হরতালের কথা শুনেছি। কিন্তু ডাক্তাররা নাকি এখন হরতাল করেছে। আমরা অনেক দূর থেকে আসলাম। সকালেও রোগী দেখবে বলে সিরিয়াল দিছে। এখন আসার পর বলছে রোগী দেখবে না। আমাদের গাড়ীভাড়া এতো কষ্টের কী কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে। এই বিচার কাকে দেব?’
এরপাশের পপুলার হাসপাতালে কাপ্তাই উপজেলা থেকে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে এসেছেন উমে সিং চাকমা নামে এক তরুণ।
তিনি ফুটপাতে হাতে এক্সরে রির্পোট নিয়ে বসে আছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত পরশু মাথা ফেটে যাওয়ায় এখানে এসে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। পরে ডাক্তার ওষুধ আর এক্সরে দিয়ে আজকে আসতে বলেছিলেন। এখন এক্সরে করানোর পর রির্পোট দেখাতে এসে জানতে পারলাম ডাক্তাররা কোনো চিকিৎসা করাবে না। আমি কাপ্তাই থেকে চট্টগ্রাম শহরে এসেছি। এখন কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। ’
এসময় কখন থেকে চিকিৎসকরা রোগী দেখবেন সেটাও প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান এ উপজাতী তরুণ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে অবস্থিত এপিক হাসপাতালে নিজের রোগ নির্ণয়ের প্রতিবেদ নিতে চকরিয়া থেকে আসেন আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল সাত হাজার টাকার পরীক্ষা করিয়েছি। ডাক্তারকে আজকে এসব রির্পোট দেখানোর কথা। কিন্তু এখনতো রির্পোটও পেলাম না আবার নাকি ডাক্তারও আসবে না। তাহলে আমাদের এই দুর্ভোগের দায় কে নেবে?’ তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আক্ষেপ জানান চিকিৎসা নিতে আসা আরেক নারী রোগী।
সিএসএসসিআর হাসপাতালে জ্বরের চিকিৎসা নিতে আসা খাইরুল হোসেন নামে একজন বলেন, ‘সকালে সিরিয়াল নিয়ে দুপুরে আসলাম। এখন বলা হচ্ছে কোনো চিকিৎসা হবে না। তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া পরামর্শ দিচ্ছেন। এর একটা সমাধান হওয়া উচিত। ’
এরকম অসংখ্য রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যেতে বাধ্য হচ্ছেন আবার অনেকে তাদের রোগ নির্ণয়ের প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন। যারা বেশি অসুস্থ হয়ে ফেরত যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা নিরুপায় হয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
বির্তকিত ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়মের দায়ে দশ লাখ টাকা ও নগরের আরেক অভিজাত বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআরে অভিযান চালিয়ে অনিয়মের অভিযোগে চার লাখ টাকা জরিমানা করে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
প্রসঙ্গত, দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর স্টাফ রির্পোটার রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাইফা গলায় ব্যথা নিয়ে গত ২৮ জুন বিকালে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৯ জুন রাতে তার মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করে দায়ীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামেন সাংবাদিকরা।
পরে ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটিও এ ঘটনার তদন্ত করে। তাদের প্রতিবেদনে, কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
একুশে পত্রিকা/এডি
ছবি : আকমল হোসেন