সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিকদেরই বাধা, কারণ কী?

সীমান্ত খোকন : নিজেকে কখনো ‘সাংবাদিক’ মনে করার স্পর্ধা দেখাই না। তবে খুব অসুবিধাজনক কোনো পরিস্থিতিতে পরলে চট করে বলেছি ‘আমি সাংবাদিক’। যেমন ধরুন, পুলিশ মাথা গরম অবস্থায় হরতালকারীদের লাঠিপেটা করছে। তখন পুলিশ হরতালকারী ভেবে লাঠি নিয়ে তেরে আসছে আমার দিকে। তখন নিজেকে রক্ষা করার জন্য ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিতাম।

কিন্তু সাংবাদিকতা শেখার চেষ্টা করছি সবসময়। সেই অর্থে আমি সাংবাদিকতার একজন ছাত্র মনে করি নিজেকে। এই পেশাটিতে কখন যে জড়িয়ে গেলাম টের পাইনি। পেশাটিতে সিরিয়াস হয়ে যাবো, এর বেতন দিয়ে আমার পেট চলবে তা ভাবিনি কখনো। যা ভাবিনি তাই হয়েছে। খারাপ না, ব্যাপারটা খুবই ভালো লাগছে।

অনেক আগের কথা। বড় ভাই সাংবাদিক। তাকে দেখেই আমার পত্রিকায় লেখার শখ। ‘যত খারাপ কাজ আছে, এসব পত্রিকায় লিখে গোমর ফাঁস করে দিতে চাই’ এমন একটা মনোভাব কাজ করছিল তখন আমার মধ্যে। ব্যস, যেই ভাবনা সেই কাজ। অধুনালুপ্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক ২০০০’ এ লেখা শুরু করলাম। শুরুটা এভাবেই হয় আমার।

কিন্তু হায়, কে জানতো আমার এই ‘ফাঁস করে দেওয়া মনোভাব’ই একদিন কাল হবে! সাংবাদিকতায় ঢুকলে যে আমার স্ব-পেশার লোকেরাই আমার শত্রু হবে তা কে জানতো?

সাংবাদিকতায় ঢুকেছি ৯ বছর হয়ে গেলো। এর মধ্যে কর্মের প্রতিষ্ঠান (পত্রিকা)পরিবর্তন হয়েছে বেশ কয়েকবার। যত দিন যাচ্ছে আমার লেখার গতি বেড়ে চলছে। এর মধ্যে যত ক্রাইম দেখতাম প্রায় সবই পত্রিকায় রিপোর্ট করে দিতাম। কিন্তু এই বিষয়টি আমার সহকর্মী সিনিয়র সাংবাদিকরা পছন্দ করতেন না। তারা মনে কষ্ট পেতেন। কিন্তু আমি তা টের পেতাম না। কিছুদিন পর এমন হতে লাগলো, আমি যখন অনেকদিন যাবৎ পরিশ্রম করে একটা প্রতিবেদন তৈরি করেছি তখন কিছু সিনিয়র ভাই নিউজ না করার কথা বলতেন।

তখন তাদের খুশি রাখার জন্য আমি সেই নিউজটি পত্রিকায় প্রকাশ করতাম না। কিন্তু যখন সবসময় এমন চলতে লাগলো তখন প্রায় সময় তাদের কথা রাখতাম, বাকি সময় তাদের কথা উপেক্ষা করে সংবাদ প্রকাশ করে দিতাম। ফলে তারা (সিনিয়র সাংবাদিক ভাইয়েরা) আমার প্রতি ভীষণ রাগ করতেন। বলে রাখা দরকার, আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন সংবাদকর্মী।

তারপর, এমনও ঘটনা ঘটেছে, ক্রাইম নিউজ করার পর আমাকে প্রেসক্লাবে ডেকে নিয়ে সাংবাদিক নেতারা শাসিয়েছেন। আর রাস্তাঘাটে ও ফোনে কতবার যে শাসিয়েছেন তার কোনো হিসেবই নেই। শুধু কি তাই। এই ক্রাইম রিপোর্ট করার জন্য আমাকে পুলিশে পর্যন্ত দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তথাকথিত সিনিয়র সাংবাদিকরা। এই কাহিনী পরে বলছি।

এমনও একবার হয়েছে, এক সরকারি অফিসের দুর্নীতির সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। একারণে আমি থানায় জিডি করি। কেন জিডি করলাম সেজন্য ওই সাংবাদিকরা আমার উপর খুব ক্ষ্যাপেছিলেন। এবং জিডি তুলে নেওয়ার জন্য সাংবাদিকরাই আমাকে চাপ প্রয়োগ করেন। প্রশ্ন করেছিলাম, জিডি তুলে নেওয়ার পর যদি আমার কোনো সমস্যা হয় এর দায় কে নেবে? তখন তারা আরো ক্ষেপে গিয়ে আমাকে বকাবকি শুরু করে। বলে, আমি নাকি বেয়াদব।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশে মাদক ঢুকছে। সেই মাদকে দেশ সয়লাব। অফিসের অ্যাসাইনমেন্টে এই নিউজটি তৈরি করার জন্য সীমান্ত এলাকায় যাই, বিজিবি’র সাথে কথা বলি। এই নিউজ কেন করতে গেলাম সাংবাদিকরা অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। এজন্য প্রচুর শাসানো হয়েছিল আমাকে। এরকম অনেক উদাহরণ আছে, যা লিখতে গেলে অনেক সময় দরকার।

এখন প্রশ্ন হলো, ক্রাইম রিপোর্ট করলে কেন সেইসব সাংবাদিকরা কষ্ট পান? কেন তারা প্রতিবেদন পত্রিকায় প্রকাশ করতে বাধা দেন? এসব বিষয়ে নিউজ হলে তাদের সমস্যা কী? এর পিছনে কী স্বার্থ তাদের?

এই প্রশ্নগুলোর পেছনে আরো কয়েকটা প্রশ্ন এসে যায়। তা হলো- জেলা প্রতিনিধির পদে চাকরি করে কত টাকা বেতন পান? আদৌ কি বেতন পান? তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য এত টাকা কোথায় পান? কীভাবে তারা সাংবাদিকতায় ঢোকার পর একাধিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে যান? কীভাবে একাধিক হাসপাতালের শেয়ার হোল্ডার ও মালিক হোন?

আপনি যদি এই প্রশ্নগুলোর সম্ভাব্য উত্তর কী হতে পারে তা না আঁচ করতে পারেন তাহলে আমি আগামী কোনো লেখায় সেই উত্তর দিব।

লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক

একুশে/এসকে/এটি