চট্টগ্রাম : এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্যপ্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর পানি দূষিত হয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মাছ মরে ভেসে উঠছে। বিশেষ করে নদীতে ময়লা পানির কারণে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় চিংড়ি মাছই বেশি মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে নদীর পানি ব্যবহার করে চর্ম রোগের শিকার হয়েছেন অনেকে।
কেউ কেউ অতি বন্যার কবলে পড়ে হালদা দূষিত হওয়ার কারণ বললেও আবার অনেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পেপার মিলের ব্যর্জ নদীতে পড়ার কারণকে দোষছেন। হালদা নদীর দূষণ প্রতিরোধে শনিবার দুপুরে মদুনাঘাটে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদপ্তর পানি দূষণের কারণ নির্ণয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছে আজ বৃহস্পতিবার।
স্থানীয়রা জানান, গত ১২ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত টানা বর্ষণে উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে যায়। হালদা নদীও এই তিন উপজেলায়। ফলে বন্যার সময় খাল, বিল, ডোবা ও পুকুরের পানি একাকার হয়ে যায়। পরে দূষিত হয়ে এসব পানি আবার গিয়ে পড়ে হালদা নদীতে। গত তিন দিন ধরে মরা মাছ ভেসে উঠতে দেখছেন স্থানীয়রা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিচার্স ল্যাবরেটরিরর সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এমনিতেই প্রতিনিয়ত নদীতে বিভিন্ন শিল্প কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য পড়ছে। এরমধ্যে এক সপ্তাহ আগে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে মুরগির খামারের বিষাক্ত বর্জ্য, শিল্প বর্জ্যসহ নানা পচাগলা পদার্থ পানি দুষণ করেছে। এ কারণে মাছ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে চিংড়ি মাছ প্রয়োজনীয় মাত্রার অক্সিজেন ছাড়া থাকতেই পারে না। তাই এই মাছই বেশি মারা যাচ্ছে।’
স্থানীয় পরিবেশকর্মী আমিন মুন্না বলেন,’এশিয়ান পেপার মিল হাটহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যর্জ সরাসরি খালের মাধ্যমে হালদা নদীতে এসে পড়ছে। বন্যায় পানি বাড়ার কারণে নদী ছাড়াও এসব দূষিত পানি খাল বিলে মিশে গেছে। ফলে নদীর মাছ মরে ভেসে উঠার পাশাপাশি খাল বিল পুকুরের মাছও মরে ভেসে উঠছে।’
এর প্রতিবাদে হালদা নদী রক্ষার দাবিতে শনিবার দুপুরে মদুনাঘাটে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন চট্টগ্রামের সভাপতি আলম দিদার বলেন, ‘ফেসবুক ও গণমাধ্যমে হালদা নদী দূষণের ফলে মাছ মরে ভেসে উঠার খবর পেয়েছি। এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস প্রজননক্ষেত্র এভাবে দূষনের কবলে পড়ার খবরটি উদ্বেগের। হালদা নদীকে রক্ষার জন্য জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। বিষয়টি সরকারের নজরে আনতে আমি নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব।’
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘খবর শুনে আমরা হালদা নদীতে গিয়েছিলাম। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বৃষ্টিতে বন্যার পানি একাকার হওয়ায় পানি দূষিত হয়ে যায়। তবে প্রকৃত কারণ উদঘাটনে বৃহস্পতিবার আমাদের টিম হালদা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করেছে। সেটা পরীক্ষার পর মাছ মরে যাওয়ার কারণ জানা যাবে।’
জানা যায়, হালদা নদী প্রাকৃতিকভাবে রুই, কাতাল ও কার্প জাতীয় মাছ প্রজননের একমাত্র স্থান। চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি উপজেলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এটি। ১২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নদীটি ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করছে আশপাশের প্রায় আড়াই হাজার জেলে।
হালদা নদীর উৎপত্তিস্থল হলো- খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার ১ নং পাতাছড়া ইউনিয়নের হালদা ছড়া থেকে। কার্যত সেখান থেকেই এই হালদা নদী উৎপত্তি হয়ে কালুরঘাটের কাছে হয়ে কর্ণফুলীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। চলতি পথে হালদায় ৩৬টি ছড়া ও খাল এসে যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে খালের সংখ্যা ১৯টি।