চট্টগ্রাম : একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি(জিডি) করেছেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ও বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি মুহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন।
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়ার আদালতে তিনি এ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে নগরের দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের কমিশনার ও প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী শনিবার (২৬ মে) চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টিতে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সাজ্জাত হোসেনকে তেড়ে গিয়ে মারতে উদ্যত হন এবং একপর্যায়ে ছেলেদের দিয়ে রাস্তাঘাটে পিটিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার কথা উল্লখ করে সাজ্জাত হোসেন আদালতের কাছে তার শঙ্কার কথা জানান এবং নিরাপত্তা চান।
এর আগে ১৭ মে মুহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন তার ফেসবুকে ‘দলের চেয়ে নেতা বড়, নেতার চেয়ে ওসি বড়’ শিরোনামে স্ট্যাটাসের সঙ্গে একটি ছবি জুড়ে দেন। তাতে সিএমপির কোতোয়ালী থানার নবাগত ওসি মোহাম্মদ মহসীনকে কোতোয়ালী থানায় উপস্থিত হয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীসহ সিটি করপোরেশনের ১২ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে।
ওসিকে শুভেচ্ছা জানাতে কোতোয়ালী থানায় উপস্থিত হওয়া অন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ হলেন, আলকরণ ওয়ার্ডের তারেক সোলায়মান সেলিম, বাগমনিরাম ওয়ার্ডের গিয়াস উদ্দিন, চাক্তাই ওয়ার্ডের হাজী নুরুল হক, দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের ইসমাইল হোসেন বালি, আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের জহরলাল হাজারি, ফিরিঙ্গবাজার ওয়ার্ডের হাসান মুরাদ বিপ্লব, এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের সেলিম উল্লাহ বাচ্চু, জামালখান ওয়ার্ডের শৈবালদাশ সুমন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের লুৎফুন্নেসা দোভাষ বেবী, আন্জুমান আরা বেগম, নিলু নাগ।
এদিকে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের সরকারের একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার দপ্তরে সদলবলে হাজির হয়ে এভাবে শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি ফেসবুক ব্যবহারী অনেকেই। ফলে তারা সাজ্জাত হোসেনের এ সংক্রান্ত পোস্টে নানান মন্তব্য করেন।
প্রাক্তন ছাত্রনেতা, চট্টগ্রাম নগর আ.লীগের সদস্য জামশেদুল আলম চৌধুরী কমেন্ট বক্সে লিখেন, ’একজন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে যেভাবে তোষামোদ করছে, মনে হচ্ছে তিনিই তাদের আশা ভরসার শেষস্থল।’
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন নামে একজন লিখেন, তেলেসমাতি একটু বেশি হয়ে গেল, সদলবলে সিম্পল একজন থানার ওসি সাহেবের কাছে যাওয়ার কারন কী? তিনি কি দেশের একজন বিখ্যাত পুলিশ! নাকি বিখ্যাত একজন ব্যবসায়ী! নাকি একজন রাজনীতিবিদ! যাই হোক না কেন, তবে ওসি সাহেব খুব সৌভাগ্যবান পুলিশ।
কেউ কি জানাবেন রহস্যের কারণ?
মোহাম্মদ মহসীন নামে একজন কমেন্ট করেন, ‘ওনি ওসি না…মেয়র মহোদয়…হা হা লজ্জা পেলাম?’
এরপর গত শনিবার চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলে দেখা হলে প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী এই ইস্যুতে সাজ্জাদ হোসেনকে মারতে উদ্যত হন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে সাজ্জাত অভিযোগ করেন।
একুশে পত্রিকাকে সাজ্জাত হোসেন বলেন, ’দলের চেয়ে নেতা বড়, নেতার চাইতে ওসি বড়’ এই পোস্টটা দেওয়াতে শনিবার আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলে হাসনী ভাই আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছেন। আমি বারবার উনাকে বুঝাতে চেষ্টা করেছি এটা আপনাকে উদ্দেশ্য করে নয়। কিন্তু ওনি মানতে নারাজ। উনি আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এরপর সেই রাতেই আমি থানায় জিডি করার জন্য কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের কাছে যাই।’
ওসি বললেন, ’আপনি আমাকে নিয়ে লিখেছেন, আবার আমার কাছে নিরাপত্তা চাইতে এসেছেন?’
উত্তরে আমি বলেছি ’আপনাকে নিয়ে কিছু লিখিনি।’ তারপর তিনি বললেন, ‘আমি চাইলে আপনাকে পিক করে নিয়ে আসতে পারতাম। ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়।’
এরপর আমি বলেছি, ’আপনি জিডি না নিলে আমি আদালতের আশ্রয় নেবো। এই বলে চলে আসলাম।’ বলেন সাজ্জাত।
দুই জনপ্রতিনিধি ও ওসির এমন আচরণে তিনি শঙ্কিত হয়ে পড়েন। ফলে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে একুশে পত্রিকাকে জানান সাজ্জাত।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর কাছে হুমকি ও জিডির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ইফতার পার্টিতে দেখার পর তাকে (সাজ্জাত) বললাম, ‘আমরা কোথায় যাব, কাকে শুভেচ্ছা জানাব এসব নিয়ে তোমার এত মাথাব্যথা কেন? তুমি কেন এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করছ, ফেসবুকে লিখছ?’
ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ না করার জন্য তাকে সতর্ক করার চেষ্টা করে বলেছি, তোমার এ আচরণে শুধু আমরা নয়, আমাদের অনুসারীদের মাঝেও কষ্ট তৈরি হয়েছে। তাদেরকে আমি বুঝিয়ে শান্ত করেছি। বলেন হাসান মাহমুদ হাসনী।
জিডির কথা শুনে প্যানেল মেয়র বলেন, ’ছেলেটা পাগল হয়ে গেলো নাকি? ঠিক আছে আমিও এখন থেকে বিষয়টি আইনগতভাবে দেখব। আইনগতভাবে জবাব দেব।’
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ওনি (সাজ্জাত) আমার কাছে জিডির কপি নিয়ে এসেছিলেন।’ আমি বললাম, ‘জিডিটা সঠিক তথ্য দিয়ে লিখে নিয়ে আসুন। তারপর দেখবো। এরপর ওনি আর আসেননি।’
তুলে নিয়ে আসা কিংবা ইট মারলে পাটকেল খেতে হয় এ জাতীয় কোনো কথা বলেননি দাবি করে ওসি মহসীন বলেন, আমি নতুন ওসি। এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করা শুভেচ্ছাবিনিময় আমার কাজেরই অংশ। তাছাড়া এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ নির্মূলের স্বার্থে জনপ্রতিনিধিসহ সবার সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক রাখতে হয়। এই সুসম্পর্কের বিষয়টিকে ফেসবুকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে ওনি ঠিক করেননি। এ কথাই আমি তাকে বলেছি। যোগ করেন ওসি মহসীন।
একুশে/এটি