রাস্তার মাথার যানজট : দায় এড়াচ্ছেন হাজারী, তিনদিন সময় চাইলেন কুসুম দেওয়ান

চট্টগ্রাম : নগরের অন্যতম প্রবেশপথ ব্যস্ততম কাপ্তাই রাস্তার মাথায় রমজানে যানজট নিরসনে ‘লোক দেখানো পরিদর্শন’ করে কিছু সিদ্ধান্ত নিলেও সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ (উত্তর)। উল্টো সিটি করপোরেশনকে আগে সড়ক সংস্কার করে যান চলাচলের উপযুক্ত করার কথা বলে দায় এড়াতে চাইছেন সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) হারুন উর রশিদ হাজারী। তবে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা কুসুম দেওয়ান তিন দিনের মধ্যেই এ সমস্যা সমাধানের সংকল্প ব্যক্ত করেছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সিএমপির সঙ্গে এক বৈঠকে রমজানে মোড় কেন্দ্রিক যানজট নিরসনে সাতদফা সুপারিশ বাস্তবায়নে ট্রাফিক বিভাগকে দায়িত্ব দিলেও নগরের গুরুত্বপূর্ণ কাপ্তাই রাস্তার মোড়ে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ উদাসীন। স্থানীয় সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল বিষয়টি নিয়ে সিএমপির আরেক উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আব্দুল ওয়ারিশের সঙ্গে কথা বললেও কোনও কাজ হয়নি।

গত ১৭ মে বিকেলে ডিসি ট্রাফিক (উত্তর) হারুন উর রশীদ হাজারী, ডিসি (উত্তর) আব্দুল ওয়ারিশ, এডিসি (উত্তর) মিজানুর রহমান, এসি পাঁচলাইশ দেবদূত ভট্টাচার্য, ওসি চান্দগাঁও আবুল বাশার, পিআই শহীদ, টিআই শওকতসহ অসংখ্য পুলিশ সদস্য কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কামাল বাজার পরিদর্শন করেন। সেই সময় স্থানীয় সংগঠক ও তরুণ রাজনীতিক আলম দিদার, আসফাক হোসাইন খানের সঙ্গে আলাপ করে আলোচ্য যানজট নিরসনে কিছু সিদ্ধান্ত নেন তারা।

বিশেষ করে কাপ্তাই সড়কে মোড়ের অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডটি সরিয়ে একশ’ হাত দূরে সিডিএ স্কুলের সামনে রাখা আর কালুরঘাট সড়কে বোয়ালখালীর গাড়িগুলোকে ৫০ হাত পূর্ব দিকে সরিয়ে আনা। আর মোড় থেকে একটু পেছনে মেট্টো প্রভাতীর গাড়ির কাউন্টার সরিয়ে নেয়া। তবে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়নের জন্য তাৎক্ষণিক চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার, টিআই শওকতকে দায়িত্বে দেন উপ পুলিশ কমিশনার আব্দুল ওয়ারিশ। ওই সময়ে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে শত শত মানুষ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে উদ্যোক্তা ও পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এদিকে মোড় কেন্দ্রিক যানজটের কারণে প্রতিদিন নগরীর অন্যতম প্রবেশপথটিতে যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এ রমজানে। এই মোড় দিয়ে রাউজান, কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও মোহারার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। একদিকে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি অন্যদিকে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।

এ প্রসঙ্গে যানজট নিরসনের উদ্যোক্তা আলম দিদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও ডিসি ট্রাফিকের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। এখানে সিএনজি স্ট্যান্ডকেন্দ্রিক যে চাঁদাবাজি হয় সেটির বিরাট একটা অংশ আমার জানা মতে ট্রাফিক পুলিশের কাছে যায়। হয়তো তাদের চাঁদার কাছে অসহায় ট্রাফিক বিভাগও। না হয় এমপি-মেয়রের কঠোর নির্দেশনা থাকার পরও পরিদর্শনের পর নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গড়িমসি কেন? দশ রোজার মধ্যে যদি মোড়ের যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে যাব।’

বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘রমজানে সড়কে বিশেষ করে মোড় কেন্দ্রিক যানজট নিরসনে সিএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপরও কাপ্তাই রাস্তার মাথার যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কেন উদ্যোগী হচ্ছে না আমার বোধগম্য নয়। আসলে তাদেরও অনেক দুর্বলতা আছে সেকারণে হয়তো তারা এসব সিএনজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না।’ এসময় বিষয়টি গণমাধ্যমে তুলে ধরারও পরামর্শ দেন মেয়র নাছির।

সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে পরিদর্শন করেছিলাম। সেই সময় বেশ কিছু সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। তবে মূল কাজটি হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগের। তাই ট্রাফিক বিভাগকেই এক কাজে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সহযোগিতা করব মাত্র।’ তিনি এসময় ডিসি ট্রাফিক হারুন উর রশিদ হাজারীর সঙ্গে কথা বলার পরমার্শ দেন।

এ প্রসঙ্গে ডিসি ট্রাফিক (উত্তর) হারুন উর রশিদ হাজারী বলেন, ‘রাস্তার মাথার মূল যানজট হচ্ছে সড়কে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে। আপনারা আগে সড়ক ঠিক করে দিতে বলেন, তারপর যানজটও থাকবে না।’ যদিও এরআগে ১৭ মে পরিদর্শনের সময় মোড়ের যানজট নিরসনে গৃহীত সিদ্ধান্তে নিজের সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান বলেন, ‘রাস্তার মাথার যানজট নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। তবে এখনো সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। আগামী তিন দিনের মধ্যে এই মোড়ের যানজট নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’

একুশে/এডি/এটি