‘নজরুল জাগরণের কবি’

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী বলেছেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধু আমাদের প্রেরণা, মুক্তি সংগ্রাম, সমাজতন্ত্র ও মানুষের কবি নন। তিনি স্বাধীনতা, অর্থনীতি, জাগরণ ও সাম্যবাদের কবি। ধর্ম নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সকল ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে কবি তাঁর কবিতা, ছড়া, গান ও প্রবন্ধে মানুষের মনের কথা বলেছেন। বাংলা সাহিত্যের গতিপথ পাল্টে বিদ্রোহ-প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ধারা তৈরি করেন জাতীয় কবি নজরুল। উন্নত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন সাম্য আর মানবতা। ধ্যান, জ্ঞান, নিঃশ্বাস-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনায় তিনি সম্প্রীতির কবি ও অসম্প্রদায়িক মেরুদণ্ড। বাংলা সাহিত্যাকাশে ধুমকেতুর সাথে তুলনীয় এ মহান কবি। কবির সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি ও বিদ্রোহ। ধর্মীয় ভেদাভেদের প্রাচীর ভাঙার ঘোষণা দেন তিনি। ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। তবে বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন- ইসলামী সংগীত তথা গজল। নজরুল প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন। যা নজরুল সংগীত হিসেবে পরিচিত। একটি সুশৃঙ্খল জাতি গঠনে তাঁর লেখাগুলো তরুণ প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারলে জাতির আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে। কবির চরিত্র বুকে ধারণ করে জাতীয় জীবনে কাজে লাগাতে পারলে সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।

শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯ তম জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কবির জন্মবার্ষিকীর এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘জাতীয় জাগরণে কবি নজরুল’।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা বলেন, কবি নজরুল তাঁর লেখায় জাগরণ, সংগ্রাম ও বিদ্রোহের কথাই বলেছেন। বাঙালি জাতির মধ্যে এ রকম প্রতিভাবান কবি আর নেই। তিনি সকল ধর্মকে সমান প্রাধান্য দিয়ে ইসলামী গজল, বৈষ্ণবী, বিপ্লবী ও চেতনার গান লিখেছেন। শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও কবিকে পরাস্ত করতে পারেন নি। তিনি সারাজীবন সাম্যের গান গেয়েছেন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। ১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় এবং তাকে ‘একুশে পদক’ দেয়া হয়। ওই বছল ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কাজী নজরুলের রচিত ‘চল চল চল’ বাংলাদেশের রণসঙ্গীত। তাঁর কিছু গান জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে গানের মালা, গুল বাগিছা, গীতি শতদল, বুলবুল ইত্যাদি। এছাড়া কবি নজরুল গান রচনাকালে ১৯টি রাগের সৃষ্টি করেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও আবৃত্তিকার ফারুক তাহেরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কবি নজরুল স্মরণে কবিতা আবৃত্তি করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. মাশহুদুল কবির।

আলোচনা সভা শেষে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কবিতা, রচনা, চিত্রাঙ্কন ও নজরুল সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কারসহ সনদপত্র তুলে দেন প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।

একুশে/প্রেসবিজ্ঞপ্তি/এটি