আজাদ তালুকদার রাউজান (চট্টগ্রাম) থেকে ফিরে : থানার প্রধান ফটকে একজন সশস্ত্র পুলিশ কনস্টেবল দাঁড়িয়ে আছেন, নাম সিরাজ। সারাদিনের ক্লান্তি বয়স্ক এ কনস্টেবলের চোখেমুখে। তার সামনেই প্রতিবেদক থানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন কোনো প্রশ্ন কিংবা জিজ্ঞাসার মুখোমুখি ছাড়াই।
এরপর প্রতিবেদক সোজা চলে যান ডিউটি অফিসারের কক্ষে। গিয়ে দেখেন ডিউটি অফিসার নেই। পুরো কক্ষটিই শূন্য। সামনের অভ্যর্থনাকক্ষটিও খালি। অফিসারদের কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায়, সেখানেও কেউ নেই। সবগুলো চেয়ার খালি পড়ে আছে। ওসি কেপায়েত উল্লাহ, ওসি (তদন্ত) মীর হোসেনের কক্ষ দুটি তালাবদ্ধ।
মুন্সীর কক্ষ খালি থাকলেও সেখানেও কেউ নেই। এসময় পুরো থানাজুড়ে বিদঘুটে অন্ধকার। প্রতিবেদক হাতড়িয়ে একটি সুইচ টিপে কিছুটা আবছা আলোর ব্যবস্থা করেন।
মঙ্গলবার (১৫ মে) সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টায় রাউজান থানার চিত্র এটি। এসময় থানার প্রতিটি কক্ষ ঘুরে কারো দেখা মেলেনি। পুলিশ তো নেই-ই। নেই কোনো স্টাফ কিংবা সেবাপ্রত্যাশী লোকজন।
আধঘণ্টা পায়চারি শেষে প্রতিবেদক মূল গেটে ফিরে আসেন। মুখোমুখি হন কনস্টেবল সিরাজের। থানার এ অবস্থা কেন, ওসি-এসআই সাহেবরা কোথায়- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিকেলবেলা তো, তাই স্যারেরা হয়তো বিশ্রামে গেছেন।’
ডিউটি অফিসার কোথায়? ‘সিরাজের উত্তর-’তিনি হয়তো চা খেতে গেছেন।’ অর্ডার করলেই তো থানায় চা চলে আসে। এটা কি অজুহাত হতে পারে?-এমন প্রশ্নে সিরাজের মুখে কুলুপ। এসময় পুকুরঘাটে সিভিল ড্রেসে বসে থাকা রিয়াজ হোসেন নামে এক কনস্টেবল যোগ দেন। সিরাজের সঙ্গে সুর মেলান তিনিও।
জঙ্গি-মৌলবাদি গোষ্ঠী কিংবা অপরাধীরা এখনো ওঁৎ পেতে আছে। থানায় পুলিশ-শূন্যতার সুযোগ নিয়ে যে কোনো অঘটন তারা ঘটাতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ একটা থানা আধঘণ্টা ধরে পুলিশ-শূন্য অবস্থায় থাকা সমীচিন কিনা জানতে চাইলে রিয়াজ বলেন, ‘কেপায়েত উল্লাহ স্যারের থানায় কোনো অঘটন ঘটা অত সহজ নয়। কেউ কিছু করতে চাইলে তার খবর আছে।’ এসময় ডিউটি অফিসার হিসেবে এএসআই মৃদুল বড়ুয়া দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানান তারা।
৬ টা ৩৫ মিনিটের দিকে গেটের বাইরে দেখা হয় থানার সেকেন্ড অফিসার নুরুন্নবীর সঙ্গে। সিভিল ড্রেসে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিনি। ৩০ মিনিট ধরে পুলিশ-শূন্যতার বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিউটি অফিসার আছে! হয়তো ওয়াশ রুমে গেছেন।’ কনস্টেবল সিরাজের উদ্ধৃতি দিয়ে ডিউটি অফিসার চা খেতে বাইরে গেছেন জানালে তিনি সিরাজের ওপর ক্ষেপে যান। বলেন, ‘আপনারও (সিরাজ) ন্যাগলেন্সি (অবহেলা) আছে। এত কথা বলতে গেলেন কেন?’
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (১৭ মে) রাত ১০ টার দিকে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কেপায়েত উল্লাহ’র সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মঙ্গলবার ডিউটি অফিসার কে ছিলন পাশের জনের কাছে জানতে চান। এরপর তার রুম কখনো তালা মারা থাকে না বলার পর টেলিফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা বিষয়টি শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনি যে তথ্য দিলেন এটা তো রীতিমত আতঙ্কের ব্যাপার। আমরা এমনিতেই টেনশনে থাকি, কখন অ্যাটাক হয়, কী হয়। আল্লাহ না করুক একটি যদি অঘটন ঘটে তাহলে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি তো যাবেই, সেই সঙ্গে জেলা পুলিশের দক্ষতা-অদক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।’
এ তথ্য জানানোর জন্য প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানিয়ে এসপি নুরেআলম মিনা বলেন, ‘আমরা আরো সতর্ক হবো এবং প্রত্যেক থানায় একই ফরমেটে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছি।’