চট্টগ্রাম : বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের হয়েছে চট্টগ্রামের একটি আদালতে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেহ মো. নোমানের আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন আসাদুজ্জামান তানভীর নামের এক ছাত্রলীগ নেতা; মামলায় তিনি নিজেকে ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
আদালত শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করে চকবাজার থানার ওসিকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী আজহারুল হক।
মামলায় দণ্ডবিধির ১২৩ক, ১২৪ক, ১৭৭, ৫০০, ৫০১, ৫০২ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এতে অভিযোগ করা হয়েছে, গত ৬ মে চকবাজার এলাকায় হোটেল জামানের সামনে ভাসমান পত্রিকা বিক্রেতার কাছে থাকা দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার শেষ পাতায়, ‘মুক্তিযুদ্ধ হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বিতর্কিত চবি শিক্ষক আনোয়ারের গবেষণায় বঙ্গবন্ধুকেও কটূক্তি’ শিরোনামের সংবাদ দেখতে পান বাদী।
উক্ত সংবাদের চুম্বক অংশে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে উল্লেখ করেছেন। এ বক্তব্যের সপক্ষে তিনি কোনো ধরনের প্রমাণ কিংবা রেফারেন্স উল্লেখ করেননি। অপরদিকে তিনি বঙ্গবন্ধু ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধারা ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফসল বলে উল্লেখ করেন।
মামলায় ওই ছাত্রলীগ নেতা আরও উল্লেখ করেন, আসামি আরো বলেন, এক সময়ের নিরপেক্ষ দল বর্তমানে আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক দলে পরিণত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তিনি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলার সঙ্গে সরাসরি আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা দাবি করেছেন।
উক্ত সংবাদ পড়ে বাদী মর্মাহত হন এবং বিভিন্নভাবে আসামির খবরাখবর নিতে থাকেন। বাদী বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারেন, উল্লেখিত সংবাদের বিষয়টি আসামি তার প্রকাশিত জার্নালে বিশদভাবে বর্ননা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল জার্নাল অব হিউমেন সোশ্যাল সায়েন্স জার্নালে ‘ধর্মীয় রাজনীতি এবং বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি; একটি চলমান সংকট’ শিরোনামের প্রবন্ধ লিখেন অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন; সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
আদালতে মামলা দায়েরের সময় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফানের ঝুলন্ত লাশ। এ ঘটনায় দিয়াজের মায়ের করা হত্যা মামলায় শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে আসামি করা হয়।
এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে নেওয়া জামিন শেষ হওয়ার পর গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে আনোয়ার হোসেন জামিন আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান আনোয়ার হোসেন।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রথম ময়না তদন্তের ২০১৬ সালের পর ২৩ নভেম্বর চিকিৎসকরা ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা বলে জানান। এরপর আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য দিয়াজের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে দিয়াজের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই সিআইডি জানায়, দিয়াজের মৃত্যু শ্বাসরোধজনিত হত্যাকাণ্ড। তবে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। দিয়াজের মৃত্যু-রহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
এসআর/একুশে