কলকাতার বাসে হস্তমৈথুন : একজন সাহসী প্রিয়াংকার গল্প (ভিডিওসহ)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কলকাতার চলন্ত বাসে দুই কলেজছাত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে প্রকাশ্যে হস্তমৈথুন করা অসিত রাই গ্রেফতার হওয়ায় কলকাতা পুলিশকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রতিবাদি কলেজছাত্রী প্রিয়াংকা দাশ। রোববার ভোরে এক ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তিনি এই কৃতজ্ঞতা জানান। একইসাথে বিকৃত রুচির পুরুষদের বিরুদ্ধে অন্য নারীদেরও সাহস করে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রিয়াংকা দাশ বলেন, অসংখ্য ধন্যবাদ যারা আমাকে সাহায্য করেছেন। কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে এতটা সাহায্য পাবো আশা করিনি। আশা করি এরকম পজিটিভ রেজাল্ট দেখে বাকি মেয়েরাও এভাবে এগিয়ে আসবে এবং আপনারা (পুলিশ) তাদের সাহায্য করে সমাজের এই নোংরা মানসিকতার মানুষদের শাস্তি দেবেন।

শনিবার কলকাতার স্থানীয় সময় দুপুরে হেদুয়া থেকে প্রাইভেট টিউশন নিয়ে দমদমের বাড়িতে ফিরছিলেন উত্তর কলকাতার একটি কলেজে পড়া বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রিয়াংকা দাশ। ৩০বি/১ রুটের ওই বাসে এক বান্ধবীর সঙ্গে সামনের দিকের আসনেই বসেছিলেন তিনি। হঠাৎ একজনের নজরে পড়ে, পিছনের আসনে বসে থাকা এক বয়স্ক লোক অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাঁদের দিকে তাকিয়ে হস্তমৈথুন করছে। এসময় বাসের অন্যান্য সহযাত্রী ও সহকারির সহযোগিতা চেয়েও পাননি তিনি। ফলে এ নোংরা কাজ সম্পন্ন করে দিব্যি বাস থেকে নেমে যান ওই ব্যক্তি।

এরপর বাসায় ফিরে একটি স্ট্যাটাস দেন প্রিয়াংকা। বলেন, ‘‘দুপুর তখন ১২টা হবে। টিউশন নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। হাতিবাগান ঢোকার আগে হঠাৎ দেখি আমাদের দেখিয়ে দেখিয়ে ওই লোকটি ‘অমন’ করছে। আমি চিৎকার করি। কেউ কোনও প্রতিবাদ না করায় ভিডিও করতে শুরু করি। তাতেও লোকটা থামেনি। আমার বন্ধুটি ভয় পাচ্ছিল। ও ভিডিও করতে বারণ করে। এর পর ভয় পেয়ে আমরা দু’জনে মিলে চিৎকার করি। কিন্তু বাসের কোনও যাত্রীই বিষয়টা নিয়ে এগিয়ে আসেননি।’’

যাত্রীটি নেমে যাওয়ার পরে বাসের কন্ডাক্টরকে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিষয়টা চিৎকার করে জানান। কিন্তু, কন্ডাক্টরের জবাব শুনে আরও চমকে যান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ কোনও প্রতিবাদ না করায় আমরা কন্ডাক্টরকে চিৎকার করে বলি। তিনি হেসে বলেন, ‘কী করব বলুন! কার মনে কী আছে, কী করে বুঝব!’ আমি চিৎকার করি, ওঁকে ধরুন। উনি আমাদের সঙ্গে অভদ্রতা করছেন। কিন্তু, কেউ আটকালো না। তার পর লোকটি নিজের আসন ছেড়ে উঠে যায়। বাস তখনও চলছে। শ্যামবাজার মোড়ের আগেই বাসটি একটু স্লো হতেই তিনি নেমে যান।’’

প্রিয়াংকার দাবি, এ ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন ওই ব্যাক্তি। দিন ১৫ আগে ওই একই পথে ফেরার সময় এমনটা ঘটে। সে বার তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তাই কাউকে কিছু বলতে পারেননি। এ বার সাহস করে ভিডিও করেছেন। ছাত্রীটির অভিযোগ, সেবার যৌনাঙ্গ বার করেই প্রকাশ্যে বাসের ভিতর হস্তমৈথুন করছিলেন এই একই ব্যক্তি।

ওই ছাত্রীর তোলা ভিডিওসহ পোস্টটি কলকাতা পুলিশ শনিবার বিকেলে তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে পোস্ট দেয়। কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, ‘এক ভদ্রমহিলা আমাদের পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে জানিয়েছেন বাসে এক পুরুষের চূড়ান্ত অশালীন অঙ্গভঙ্গির কথা। সেই পোস্টটির উল্লেখ করে অনেকে আমাদের মেসেজ করেছেন প্রতিকার চেয়ে। লিখিত অভিযোগের কোনও প্রয়োজন দেখছি না আমরা এই ক্ষেত্রে। তাঁর পোস্ট এবং ভিডিও দু’টিই যথেষ্ট। তার ভিত্তিতেই ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছি আমরা বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই। ওই পুরুষকে যত দ্রুত সম্ভব চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি রইল।’

এর পরেই পুলিশ তৎপর হয়ে শনিবার রাতে শ্যামবাজার থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম অসিত রাই। বাড়ি হুগলির বৈদ্যবাটিতে। পেশায় সে হকার।

এদিকে, সাহসী ভূমিকার জন্য কেবল কলকাতা নয়, পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছে প্রিয়াংকা দাশের সুনাম। প্রশংসা আর অভিনন্দনে ভাসছে প্রিয়াংকার ফেসবুক ওয়াল। রাখী হাওলাদার নামে একজন লিখেন, ‘ধন্যবাদ, কজনেরই বা এই সাহসিকতার পরিচয় আছে! তোমার মতো প্রত্যেকটি নারী জেগে উঠুক। দেশ তো তখনই বদলাবে যখন তোমার মতো নারীরা জেগে উঠবে।’

জয়দেব সামন্ত নামের একজন প্রিয়াংকার উদ্দেশ্যে বলেন, সব মেয়েদের তোমার মতন সাহসী হতে হবে। তাহলেই কেউ মেয়েদের দিকে কিছু করার আগে দশবার ভাববে। আজ মাতৃদিবসে তোমায় অভিনন্দন জানাই।

‘বাঘিনী কন্যা’, ‘এই প্রজন্মের সাহসী মেয়ে’ বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।

একুশে/এটি