সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফুলবাড়িয়ার ফকিরের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিতঃ ১০ মে ২০১৮ | ৫:০৩ অপরাহ্ন

ডেস্ক রির্পোট : একাত্তরে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় হত্যা, ধর্ষণ, গণহত্যার মত মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার দায়ে তখনকার আল-বদর কমান্ডার রিয়াজ উদ্দিন ফকিরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করে।

রায়ে বলা হয়, ফকিরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা চার অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুটি অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যু পর্যন্ত ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে তার সাজা কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। ৬৯ বছর বয়সী আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকির বৃহস্পতিবার রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

এ মামলায় প্রাথমিকভাবে তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলও অভিযোগ গঠনের আগে গ্রেপ্তার আসামি আমজাদ আলী কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা গেলে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।

আরেক আসামি ওয়াজ উদ্দিন মারা যান পলাতক অবস্থায়। অভিযোগ গঠনের পর তার মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হলে ট্রাইব্যুনাল তার নামও বাদ দেয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকউশনের তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একাত্তরে রিয়াজ উদ্দিন ফকির জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘে জড়িত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গড়ে তোলা আল-বদর বাহিনীতে যোগ দেন এবং স্থানীয় কমান্ডারের দায়িত্ব পান। ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে ওই বাহিনীর সঙ্গে তিনি যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটিয়েছিলেন, তা উঠে আসে এ মামলার বিচারে।

তার সর্বোচ্চ সাজার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, “এই রায়ে আমরা অবশ্যই খুশি। যারা বিচার চেয়েছেন, তারা এই রায়ের মাধ্যমে বিচার পেয়েছেন।”

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, “এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিফলিত হয়নি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব। সেক্ষেত্রে আসামির সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের মামলায় রায়ের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা যায়।

এক প্রশ্নের উত্তরে শাহীন বলেন, “এ মামলায় যেসব সাক্ষ্যপ্রমাণ এসেছে, তাতে ফাঁসি দেওয়া সম্ভব না। সুতরাং এই রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ।”

২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে দেওয়া অভিযোগপত্রে এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২২ অগাস্ট থেকে ২১ নভেম্বরের মধ্যে ফুলবাড়িয়া উপজেলার বেবিট্যাক্সি স্ট্যান্ড, রাঙ্গামাটিয়া ঈদগাহ সংলগ্ন বানা নদী, দিব্যানন্দ ফাজিল মাদরাসা, ফুলবাড়িয়া ঋষিপাড়া, আছিম বাজার ও ভালুকজান গ্রামে আসামিরা মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান বলে উল্লেখ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন জানান, দুই নম্বর অভিযোগের একমাত্র আসামি ওয়াজ উদ্দিনের মৃত্যু হওয়ায় রায়ে তা আর বিবেচনা করা হয়নি। বাকি চারটি অভিযোগেই রিয়াজ উদ্দিন ফকির আসামি ছিলেন। এর মধ্যে ১ ও ৫ নম্বর অভিযোগে ফকিরকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং তিন ও চার নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামের শহীদ তালেব মণ্ডলের ছেলে খোরশেদ আলী বাদী হয়ে ময়মনসিংহে একটি মামলা করলে তা ট্রাইব্যুনালে আসে।

ওই মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার বাবা তালেব মণ্ডলকে একাত্তরে আখিলা নদীর ব্রিজের ওপর দাঁড় করে গুলি করে হত্যা করেন রিয়াজ ফকিরের নেতৃত্বে অন্য আল-বদর ও রাজাকার সদস্যরা। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ১ বছর ৪ মাস ৭ দিনে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন।

২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিন আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তা প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করে তদন্ত সংস্থা। পরে ২১ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউশন ট্র্যাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। এ মামলায় ট্রাইবুনালে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ঋষিকেষ সাহা। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।

প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ২১ মার্চ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিল এই ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত রায় আসা ৩২টি মামলার ৭৪ আসামির মধ্যে পাঁচজন বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মোট ৬৯ জনের সাজা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪২ যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে।

সূত্র : বিডিনিউজ