.আবু আজাদ, রাঙ্গুনিয়া থেকে ফিরে : প্রায় শ’দুয়েক সাইকেল। সব সাইকেল-আরোহীর গায়ে সাদা টিশার্ট। মাথায় হ্যালমেট। সাঁ সাঁ গতিতে ছুটে চলছে নয়নাভিরাম কাপ্তাই সড়ক ধরে। প্রথমে দেখে যে কারো মনে হতে পারে আট-দশটা সাইকেলর্যালির মতোই। কিন্তু ভালো করে লক্ষ করলেই চোখ আটকে যায় সামনের সারির একজন সাইকেল-চালকের ওপর। একি! এ যে খোদ এমপি!
শুক্রবার বিকেলটা এমনই ছিলো কাপ্তাই সড়কের দু’পাশের মানুষদের জন্য। অবাক হয়ে, আগ্রহ নিয়ে তারা দেখেছেন তাদের জনপ্রতিনিধিকে একেবারে সাধারণ বেসে, নিজেদের পাশে।
রাঙ্গুনিয়া পৌরসভায় বাইসাইকেল সেবার উদ্বোধন করে প্রায় দু’শতাধিক বাই সাইকেল নিয়ে কাপ্তাই সড়কে পরিবেশবান্ধব বাহন সাইকেল-র্যালির নেতৃত্ব দেন ড. হাছান মাহমুদ। সাইকেল-র্যালিটি উপজেলা সদর থেকে রাঙ্গুনিয়া কলেজ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। এসময় রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার মানুষ তাদের এমপিকে হাত নাড়িয়ে স্বাগত জানান। এমপিও বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে, কখনো সাইকেল থেকে নেমে জনসাধারণের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
জনপ্রতিনিধির এমন ব্যতিক্রম আয়োজনে যারপরনাই খুশি রাঙ্গুনিয়ার মানুষ। রাঙ্গুনিয়া চৌমুহনী এলাকা দিয়ে সাংসদ যখন সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন রাস্তার পাশে দাঁড়ানো এক বৃদ্ধ বলেন, ‘মন্ত্রী (সাবেক) সাহেব আজ তার অনুজদের দেখিয়ে দিলেন কীভাবে মানুষের কাছাকাছি থাকতে হয়। নিজের এলাকায় নিজেদের ছেলের মতোই তিনি রাস্তায় নেমে এলেন। জনগণের এতটা কাছাকাছি আগে কেউ আসেনি।’
সাইকেল-র্যালিতে অংশ নেয়া রাঙ্গুনিয়া খিলমোগল রসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র জাকির হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার জন্য অনেক প্রেরণার। শ্রদ্ধেয় সাংসদের সঙ্গে সাইকেল চালালাম। সাইক্লিং আমার নেশা। আজকের পর থেকে কেউ এ নিয়ে আশা করি কথা বলবে না। তারা নিশ্চয় বুঝবেন এটি সমাজের সুস্থধারার একটি বিনোদন।’
এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘লন্ডন, প্যারিস ও নিউইয়র্কের মতো বড় বড় শহরগুলোতে বাই সাইকেলের স্ট্যান্ড রয়েছে। সেখান থেকে সাইকেল নিয়ে সাধারণ মানুষ সাইকেল ব্যবহার করেন। স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার জন্য সবাই এই সুবিধা নেন। আমি নিজেও পিএসডি করার সময় ছয় কি.মি সাইকেল চালিয়ে ভার্সিটিতে আাসা যাওয়া করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগে একসময় উত্তর রাঙ্গুনিয়ায় সাইকেল ভাড়া দেওয়া হতো। রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা আবারো তা শুরু করলো। বাংলাদেশের প্রথম পৌরসভা হিসেবে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা সাইকেল-সেবা চালু করে পথপদর্শক হয়ে থাকবে। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে নির্বিঘ্নে সাইকেল চালাতে আলাদা লেন তৈরি করা হবে।’
পৌর মেয়র শাহজাহান সিকদার বলেন, ‘এটি মোট ২ লক্ষ টাকার প্রকল্প। পৌরসভা আঙিনায় একটি সাইকেল-স্ট্যান্ড থাকবে, পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ড জমা দিয়ে মাত্র ১০ টাকায় একটি সাইকেল পাওয়া যাবে সারাদিনের জন্য। কাজ-শেষে সাইকেল জমা দিয়ে আইডিকার্ড ফেরত নিতে হবে। প্রাথমিকভাবে ১০ টি সাইকেল নিয়ে এ সেবা শুরু হলো। টিকিট মূল্যে আইডি কার্ড জমা দিয়ে নাগরিকরা এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। দূর-দূরান্ত থেকে পৌরসভায় এসে হাঁটার দূরত্বের কাজগুলো তারা সাইকেলে চেপে সেরে নিতে পারবেন।’
একুশে/এএ/এটি