নগর আ’লীগের রাজনীতি : ঐক্যের পথে নাছির-সুজন

.আলম দিদার : দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দূরত্ব গুছিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাছাকাছি আসলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদুল আলম সুজন ও সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। আগামীতেও তাদের ঐকব্যদ্ধ এই রাজনৈতিক পথচলায় তৃণমূলকে সুসংগঠিত করার মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই দুই নেতার।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং সহ সভাপতি খোরশেদুল আলম সুজন দীর্ঘদিন ধরে দূরত্ব বজায় রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতেন। বিশেষ করে বন্দর-পতেঙ্গা আসনে ব্যবসায়ী নেতা এম এ লতিফ আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হবার পর থেকে তাদের এই দূরত্ব বাড়তে থাকে। কেননা সুজন নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর একনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে পরিচিত। ফলে এমপি লতিফের সঙ্গে আ জ ম নাছির উদ্দিনের সখ্যতায় এই দূরত্ব বাড়ার মূল কারণ ছিল।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরের সিবিএ নির্বাচন নিয়ে এমপি লতিফের সঙ্গে মেয়র নাছিরের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার পর প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে সর্ম্পক গড়ার চেষ্টায় আছেন এমপি লতিফ। যেটি গণমাধ্যমে নিজে স্বীকারও করেছেন লতিফ। অন্যদিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের ঘনিষ্ঠ রাজনীতিক খোরশেদুল আলম সুজন রাজনৈতিক এই সমীকরণে অনেকটা বেকাদায় পড়ে যান। যদিও বা মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে এমপি লতিফের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টির সংবাদকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কেননা, এই এমপি লতিফের বিরুদ্ধেই জীবদ্দশায় নেতাকর্মীদের নিয়ে বেশ সরব ছিলেন প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী।

অন্যদিকে, মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর নগর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের হাতে চলে আসে। বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর শারীরিক অসুস্থার সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছেন নাছির। দীর্ঘদিনের বিভক্ত নগর আওয়ামী লীগকে ঐকব্যদ্ধ করার মাধ্যমে নিজের একক নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় আছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। আর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের এই ঐক্যবদ্ধের প্রচেষ্টাকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে সেই পথচলায় সামিল হয়েছেন খোরশেদুল আলম সুজনও। তারই অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি দলীয় কর্মসূচিতে খুব কাছাকাছি ও হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে এই দুই নেতাকে।

জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদুল আলম সুজন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘নাছিরের সঙ্গে আমার তেমন কোনও বিরোধ ছিল না। আগে মহিউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ থাকার কারণে আমিও তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতাম। তবে এখন সেরকম কোনো ঘেঁষাঘেষি নেই।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নাছিরের আচরণ আগের থেকে বেটার হয়েছে এখন। আগে তিনি নিজ গণ্ডির বাইরে যেতেন না। এখন সদস্য সংগ্রহসহ সকল কাজের জন্য কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। দায়িত্ব সব নিজের কাছে না রেখে বণ্টন করে দিয়েছেন। সেই দিক থেকে তিনি সবাইকে নিয়ে ঐকব্যদ্ধ কাজ করার মানসিকতা দেখাচ্ছেন। তাই দলের স্বার্থে আমিও সেই ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক পথচলায় আছি।’

একই সুরে কথা বললেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দলে ভিন্ন পথ ও মতের মানুষ থাকবে। এরমধ্যে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলও কাজ করে সব সময় নিজেদের স্বার্থ বাস্তবায়নে। তবে আমাদের সভাপতি মহিউদ্দিন ভাই মারা যাওয়ার পর মাহতাব ভাইকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হলেও উনার শারীরিক সমস্যার কারণে সংগঠনের বেশিরভাগ কাজই আমাকে করতে হচ্ছে। সে কারণে আমিও চেষ্টা করছি সকলকে সঙ্গে নিয়ে দলকে তৃণমূল থেকে সুসংগঠিত করতে। তারই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সংগঠন পরিচালনা করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এখন কোনো বিভেদ বা দূরত্ব নেই। আমি যে ঐক্যপ্রচেষ্টা শুরু করেছি সেই প্রচেষ্টায় সুজন ভাইও আছেন। তিনিও তার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন। উনার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ বা দূরত্ব নেই। আমরা ঐকব্যদ্ধ রাজনীতির মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কাজ করব। মহানগরের সব আসন নেত্রীকে উপহার দিতে চাই। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।’

এডি/এটি/একুশে