মেয়রের সাথে ইমু-দস্তগীরের সাক্ষাতে তোলপাড়, রনির অনুসারীরা হতাশ

আলম_দিদার : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সাথে নগর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করা শীর্ষ দুই নেতার সাক্ষাত নিয়ে তোলপাড় চলছে।সাধারণ সম্পাদক থেকে অব্যাহতি পাওয়া নুরুল আজিম রনির কর্মী সমর্থকরা নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের এই সাক্ষাতকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। অনেকে তাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেও ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন আবার অনেকে নিজেদের হতাশার কথাও তুলে ধরেছেন।

এদিকে মেয়রের পক্ষ থেকে অভিভাবক সংগঠনের শীর্ষ নেতা হিসেবে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার সাক্ষাতের বিষয়টিকে স্বাভাবিকই বললেও তার অনুসারীরা ইতিবাচকভাবে ব্যাপক হারে ফেসবুকে তা প্রচার করছেন । তবে বিষয়টি নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী বিশেষ করে রনির কর্মী সমর্থকদের ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করলেও এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া নেই ইমু ও দস্তগীরের। তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিকাল ৫টা পর্যন্ত ফেসুবকেও কোনও পোস্ট দেননি বিষয়টি নিয়ে।

সম্প্রতি, এক কোচিং ব্যবসায়ীকে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠার পর ছাত্রলীগের সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি পান আলোচিত-সমালোচিত ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি।তখন তার স্থলাভিষিক্ত হন একই ব্লকের মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী জাকারিয়া দস্তগীর।কিন্তু রনির অনুসারীরা বিভিন্ন সংগঠনের নামে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত চাঁদাবাজির মামলা প্রত্যাহার ও স্বপদে পুর্নবহালের দাবিতে রাজপথে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন করলেও সেখানে নগর ছাত্রলীগের কোনও অংশ গ্রহণ ছিলনা। বিশেষ করে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের ভূমিকা ছিল একেবারে নীরব। এনিয়ে অনেকে স্ট্যাটাস দিলেও রোববার দুপুরে সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের সাথে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা সাক্ষাতের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

বিশেষ করে রনির পক্ষে সোচ্চার প্রাণের ৭১ নামের একটি সঙগঠনের আহ্বায়ক সিলভি আনোয়ার নির্মানাধীন সুইমিংপুল পরিদর্শনের সময় মেয়রের সাথে ইমু-দস্তগীরের ছবি দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হায়রে রাজনীতি! নুরুল আজিম রনি তুই ভাই সত্যি বোকা।বেস্ট পল্টি অফ দি ইয়ার।’ সিলভি আনোয়ারের এই পোস্টে বেশিরভাগ মন্তব্যদাতাই ইমু আর দস্তগীরের বিপক্ষে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

নগর ছাত্রলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বীর চট্টলায়, ছাত্রলীগের আর্দশিক রাজনীতি ডাইনোসরের মতো বিলীন হয়ে যাবে অদূর ভবিষ্যতে।’

হাবিব সোবহান চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন, ‘সাবেক সাধারণ সম্পাদক যখন মেয়র সাহেবের গুতাগুতিতে ঠিকতে পারেনি তবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের কি মেয়র সাহেবের সাথে খাতির রাখা উচিত নয়? ছাত্রলীগ জাতির কাছে প্রশ্ন…’

নুরুল আজিম রনির একনিষ্ট কর্মী ওমর গণি লিখেছেন, ‘হায়রে রাজনীতি, ছাত্রলীগ এর রক্তের দাম আর রইলো না আর কি!!!’

‘আমরা নুরুল আজিম ররিন ভক্ত’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে শতকত চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন, ’২৯ এপ্রিল তারিখটা ঠিক আছে শুধু সময়ের ব্যবধানটা অনেক পার্থক্য করে দিল.. ওইটা ছিল ১৯৯১ আর এটা ২০০৮ ভালো থাকুন মীরজাফররা।’

তৌহিদ নামে একজন লিখেছেন, ‘তোরা কখনোই ছাত্রবীর রনি হতে পারবি না, ঘৃনা করি তোদের আজ এই ঘৃণ্য অপ প্রয়াসকে। তোরা বীর চট্টল্লার ছাত্র সমাজের চোখে আধুনিক যুগের খন্দকার মোস্তাকের তকমা পেয়ে গেলি।’

সৈয়দ মোহাম্মদ বোরহান নামে একজন সুইমিংপুলি বিরোধী নগর ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ছবি ও আজকে সেই সুইমিংপুল পরিদর্শনে মেয়রের সাথে ইমু-দস্তগীরের ছবি দিয়ে পার্থক্য করে ‘তখন-এখন’ শিরোনামে লিখেছেন, শুধু এটা দেখার বাকি ছিল।’

সালাউদ্দিন জিকু নামে একজন আজকের ছবিটি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগ থেকে যেমন বীর সেনানীর জন্ম হয় তেমনি বেঈমান বিশ্বাস ঘাতকের জন্মও হয়।’

তবে মুনতাসির চৌধুরী মাহিন নামে একজন ছবিটি দিয়ে লিখেছেন, ‘মাই কিউরাস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নোহ, যারা সুইমিংপুলের পানিকে রক্তে লাল বানাতে চেয়েছিল তাদের কি সেই পুলের স্বচ্ছ পানি কি তাদের জন্য হালাল হবে?! অভিনন্দন মাননীয় মেয়র আরেকটি সফলতার দাড়প্রান্তে পৌছায়। এভাবেই সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। অভিভাবকদের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা না করে সকলে তার উন্নয়ন কর্মের গর্বিত অংশীদার হউক অন্তত মৌন সমর্থন জানিয়ে। বত্ব : নোংরা দুর্গগন্ধযুক্ত কীটটাকে ঢাকাইয়া কিছু পাকনা ছাড়া এখন নিজ ঘরের লোকেরাও খায় না।’ এরকম আরো অসংখ্য পোস্ট এবং মন্তব্য রয়েছে ফেসবুকের ওয়ালজুড়ে।

আজকের বৈঠকের বিষয়ে মেয়রের বরাত দিয়ে তার একান্ত সহকারী সচিব রায়হান ইউসুফ একুশে পত্রিকাকে বলেছেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সকল সহযোগি ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের অভিভাবক মেয়র মহোদয়। সেই হিসেবে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি উনার সাথে দেখা করেছেন আজকে। তারা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে সংগঠন সর্ম্পকে বিভিন্ন উপদেশ পরামর্শ নিয়েছেন, তারাও তাদের কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তাদের অভিভাবককে।এটাতো একদম স্বাভাবিক একটা বিষয়।’

তবে নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেত্বের সাথে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের দূরত্ব চলছিল। গত দু বছর আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনে জেলা ক্রীড়া সংস্থার তত্ববধায়নে নির্মাণাধীন আউটার স্টেডিয়ামে চলমান সুইমিংপুল নির্মাণে বাধা দিতে গিয়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে ছিল ইমু রনির নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ। আর এর জন্য ওই সময় মেয়র ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারি আ জ ম নাছির উদ্দিনকে দোষারোপ করেছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে সরব ছিলেন সদ্য পদ হারানো নুরুল আজিম রনি।

এডি/একুশে