মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

রেকর্ডের সপ্তাহে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের হ-য-ব-র-ল অবস্থা

প্রকাশিতঃ ২৯ এপ্রিল ২০১৮ | ২:০৮ অপরাহ্ন

আবু আজাদ : এই তো পাঁচ দিন আগে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছে দেশ। কিন্তু এই রেকর্ডের ছিঁটে ফোটা প্রভাবও নেই চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জনজীবনে। গ্রীষ্মের শুরু থেকেই চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে তীব্র লোডশেডিং। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে অতিষ্ঠ নাগরিক জীবন।

বুধবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউস সাংবাদিকদের জানান, গত ২৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাতে ১০ হাজার ১৩৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

কিন্তু এর পরেও মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহক। খোদ বন্দরনগরী চট্টগ্রামেই কয়েক দিন থেকে দিনে তিন-চারবার লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা মানুষের ভোগান্তিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

নগরীর চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার গৃহিনী মনোয়ারা বেগম একুশে পত্রিকাকে বলেন , ‘১১-১২ দিন ধরে চট্টগ্রামে চলছে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপ। তার ওপর গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রবল সংকট। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের নগরজীবনে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। গ্যাস-বিদ্যুতের এ তীব্র সংকটে অনেক এলাকায় পানিরও সমস্যা দেখা দিয়েছে।’

আজ রোববার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি এলাকা জহুর হকার্সে গিয়ে দেখা যায় হাঁসফাঁস অবস্থা। ঘিঞ্জি এলাকায় অনেকে তীব্র গরমে বসে ঘামছেন, কিন্তু বিদ্যুৎ নেই।

দর্জি দোকান মালিক সাইফুল বলেন, ‘এখন সবকিছু মেশিনে হয়। তাই সেলাইয়ের কাজও হয় মেশিনে। কিন্তু দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার লোডশেডিং হচ্ছে। এতে আমার কাষ্টমারদের দেয়া কথা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এখনও আমার কর্মচারীরা বাইরে ঘোরাফেরা করছে। বিদুৎ নেই, তাই কাজ করতে পারছে না।’

কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ এটিকে লোডশেডিং বলতে নারাজ। পিডিবি চট্টগ্রাম দক্ষিণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (গণসংযোগ) মো. শহিদুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘গত দু-তিন দিন বিদ্যুতের যে সমস্যা হচ্ছে, এটা আসলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। কয়েক দফা কালবৈশাখীতে বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ বিতরণে সমস্যা হচ্ছে।’

গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পিডিবি এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৯৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছেন। দেশে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস-এলএনজি আসছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। এতে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।’

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা কমপক্ষে ১০০০-১০৫০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৫০০-৫৫০ মেগাওয়াটের মতো। বাকি ৪০০ বা ৪৫০ মেগাওয়াটের জন্য বেসরকারি ছয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও জাতীয় গ্রিডের সরবরাহের দিকে চেয়ে থাকতে হয়।

চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাতটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ২৮৫ মেগাওয়াট। দীর্ঘ দিন ধরে সেগুলো চলছিল জোড়াতালি দিয়ে। সাত কেন্দ্রের তিনটি গ্যাসভিত্তিক, দুটি পিকিং পাওয়ার প্লান্ট, একটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও একটি কম্বাইন্ড সাইকেল। এর মধ্যে চারটিই বন্ধ।

গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় বন্ধ আছে রাউজানের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিটই। বন্ধ রয়েছে ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন শিকলবাহা কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রও। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট থেকে রাউজান বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এবং ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শিকলবাহার দুই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল)।

একুশে/এএ