২৭ বছর পরও ঝুঁকিতে উপকূলের মানুষ

আজাহাদুল ইসলাম আরফাত : আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। ভয়াবহ দুর্যোগের দুঃসহ স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলের মানুষ।

এদিকে ৯১-এর পর গত ২৭ বছরে আরও বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কের মুখে ফেলে দিয়েছিল কুতুবদিয়াবাসীকে। সংকেত দেওয়া হলেই এলাকায় শুরু হয় ছোটাছুটি। গত কয়েক বছরে ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও এলাকায় বেড়েছে সুনামি-আতঙ্ক।

দেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে তিন দিকে বঙ্গোপসাগর ও এক দিকে ভয়াল কুতুবদিয়া চ্যানেলবেষ্টিত এ উপজেলায় ’৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৩০ হাজারের বেশী লোকের প্রাণহানি ঘটে। বহু মানুষ নিখোঁজ হয়। জলবেষ্টিত কুতুবদিয়া পরিণত হয় বিরানভূমিতে। এত দিনেও এই ভূখণ্ডটিকে নিরাপদ করা যায়নি। বায়ু বিদ্যুৎ কিছু এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। বেশিরভাগ এলাকায় নেই বিদ্যুৎ। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা নেই। আবার কিছু আশ্রয়কেন্দ্র দখল করে প্রভাবশালীরা বানিয়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও কুতুবদিয়া জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকির মুখেই থাকছে। অধিকাংশ এলাকায় বাঁধ না থাকায় কুতুবদিয়া বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। বাঁধের অভাবে কুতুবদিয়া ধীরে ধীরে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ১৯৯১ সালে সন্দ্বীপে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে। সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে এলাকার মানুষ। সন্দ্বীপের অনেক জায়গায় এখনো বেড়িবাঁধ নেই।

এখনো উপকূলের মানুষের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন। আরেকটা বড় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। দুর্যোগ মোকাবিলার কোনো প্রস্তুতি নেই।

১৯৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর এখানকার মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। সংকেতব্যবস্থার ক্ষেত্রে তারা খুবই সজাগ। তবে সমস্যা রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রের ক্ষেত্রে। প্রয়োজনের তুলনায় এখানে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা অনেক কম। আবার এর অধিকাংশই ব্যবহারের অনুপযোগী। প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে যানবাহন ও উপকরণেরও অভাব রয়েছে।

উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্র, জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর বেড়িবাঁধ ও প্যারাবন সৃজন করা হয়নি। ফলে কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ বিভিন্ন উপকূলে বসবাসকারী অন্তত ৩০ লাখ মানুষ চরম ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা বিভাগ।