চট্টগ্রাম : পুলিশের বিশেষ ব্যাংক ‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ’-এর লভ্যাংশ পুলিশ কল্যাণ-ট্রাস্টে যাবে; এরপর কল্যাণ-ট্রাস্ট থেকে ব্যাংকের অর্থ জমাকারী সদস্যদের নির্দিষ্ট হারে প্রতিবছর লভ্যাংশ প্রদান করা হবে।
২৪ এপ্রিল পুলিশ সদর দফতরের এক চিঠিতে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়; সেখানে স্বাক্ষর করেছেন অতিরিক্ত ডিআইজি (কল্যাণ ট্রাস্ট) ড. শোয়েব রিয়াজ আলম।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল বিকেলে ‘পুলিশের ব্যাংক নিয়ে মাঠপর্যায়ে অসন্তোষ!’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একুশে পত্রিকা। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, পুলিশের ব্যাংকের লভ্যাংশ কল্যাণ-ট্রাস্টে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রেক্ষিতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অসন্তুষ্ট পুলিশ সদস্যদের দাবি, কনস্টেবল থেকে এসআই পদের কর্মকর্তারা কল্যাণ-ট্রাস্ট থেকে তেমন উপকৃত হন না। অথচ পুলিশে সংখ্যার দিক থেকে তারাই সিংহভাগ।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত ২৪ এপ্রিল ব্যাংক নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি চিঠি অনুমোদন হয়। এই চিঠি ২৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে পৌঁছাতে শুরু করে।
সেখানে বিষয়স্তুরস্থলে উল্লেখ করা হয়েছে- বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ-ট্রাস্টের অধীনে প্রতিষ্ঠিতব্য ব্যাংকে বিনিয়োগকারী সদস্যগণের প্রাপ্য সুবিধাদি পুণ: অবগতকরণ প্রসঙ্গে।
প্রস্তাবিত ব্যাংকে বিনিয়োগ করে কী কী সুবিধা সদস্যরা পেতে পারেন তা ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
১. ব্যাংকের লভ্যাংশ বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টে ব্যাংক তহবিল খাতে জমা হবে। কল্যাণ-ট্রাস্ট থেকে প্রতিবছর অর্থ জমাকারী সদস্যদের নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ প্রদান করা হবে।
২. পুলিশ বিভাগের চাকুরি থেকে অবসর কিংবা ইস্তফা প্রদানকারী সদস্যগণ তাদের জমাকৃত অর্থ বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে উত্তোলন করতে পারবেন।
৩. কল্যাণ-ট্রাস্টে অর্থ জমাদানকারী সদস্যদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে অবসর গ্রহণ করেছেন তাদের অর্থ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
৪. সদস্যগণ স্বল্প সুদে ঋণসুবিধা পাবেন।
৫. জমি ক্রয়, গৃহনির্মাণ-মেরামত, ব্যবসা উদ্যোগ প্রভৃতি ঋণের ক্ষেত্রে সদস্যদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
৬. সদস্যদের প্রয়োজনে ব্যাংক হতে বেতনের অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করতে পারবে।
৭. বিশেষ ক্ষেত্রে বিনা জামানতে ঋণ প্রদান সম্ভব হবে।
৮. নিজস্ব ব্যাংক থাকায় আর্থিক লেনদেন সহজ হবে।
৯. অন্য অনেক সংস্থার ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশেও নিজস্ব ব্যাংক থাকলে সঠিক ও স্বচ্ছ লেনদেনের কারণে জনগণের মাঝে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
ব্যাংক থেকে পুলিশ সদস্যদের এসব সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয় তুলে ধরার পর ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ কল্যাণ-ট্রাস্টে সদস্যদের চিকিৎসার্থে শুধুমাত্র ব্যয়িত হবে- এরকম একটি ভুল ধারণা কোন কোন সদস্যের মনে জন্মেছে। প্রকৃতপক্ষে ব্যাংক লভ্যাংশ কল্যাণ-ট্রাস্টে জমা হলে তা থেকে জমাকারী সদস্যদেরকে নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ দেয়া হবে। (যা উপরে ১ নং এ বর্ণিত রয়েছে)
গত ২৪ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি ড. শোয়েব রিয়াজ আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘উল্লেখ্য যে, পুলিশের অনেক সদস্যের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে, কল্যাণ-ট্রাস্টের অনুদানের অর্থ শুধু এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য ব্যয় করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এ অর্থ পুলিশের সকল সদস্যের জন্যই চিকিৎসা অনুদান হিসেবে ব্যয় করা হয়। এ যাবতকাল বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ-ট্রাস্ট হতে ১৫৩৯ জন বিভিন্ন পদে পুলিশ সদস্যদের ১৪ কোটি ৯৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৬২ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। তন্মধ্যে ১৯৩ জন এএসপি থেকে তদূধ্বর্, ১৩০৫ জন কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর এবং ৪১ জন সিভিল সদস্য। এতে দেখা যায় যে, কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সদস্যরাই অধিক সংখ্যায় অনুদান পেয়েছে।’
চিঠিটির শেষে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে লেখা হয়, আপনার অধীনস্ত সকল ইউনিটের সদস্যদের উপরোক্ত বিষয়গুলি সংক্রান্তে শীঘ্রই কল্যাণসভা আহ্বান করে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হল। পাশাপাশি এ বিষয়সমূহ নোটিশবোর্ড ও পুলিশ লাইনে বিভিন্ন দৃশ্যমাণ জায়গায় টাঙ্গানোর জন্য অনুরোধ করা হল।
একুশে/এসআর/এটি