চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ রহমত নগর গ্রামের বাসিন্দা জাহানারা বেগমকে (৬৫) মুমূর্ষু অবস্থায় গত শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আনা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখান থেকে নেওয়া হয় হৃদরোগ বিভাগে। এ বিভাগে বলা হয় এটি মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগী।
জাহানারা বেগমের সন্তান আলতাব হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমার আম্মাকে মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। তখন একাধিক চিকিৎসক রুমেই ছিলেন। আমি কয়েকবার গিয়ে মায়ের চিকিৎসার জন্য অনুনয় করলেও কেউ আসেননি। কয়েকবার রুম থেকে আমাকে বেরও করে দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের পায়েও ধরি। তারা বললেন, ‘আপনি যান, আমরা আসতেছি।’ অথচ আমার সামনেই মা ছটফট করছেন। এভাবে বলতে বলতে একঘণ্টা পরই মুমূর্ষু মায়ের চিকিৎসা করা হয়। তবে পরদিনই আমি মাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাই।’
বুধবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে চমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের সামনে অনুষ্ঠিত ‘হাসপাতাল সেবা ও চিকিৎসা বিষয়ে সেবাগ্রহীতাদের পরামর্শ ও অভিযোগের উপর গণশুনানি’তে সরাসরি এই অভিযোগ দেন তিনি।
শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন চমেক হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম, উপ পরিচালক ডা. রোকেয়া খাতুন, সহকারি পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি, মেডিসিন বিভাগের ডা. আবদুস সাত্তার, টেলিফোন ও তথ্য কেন্দ্রের ইনচার্জ আবদুল হক মিয়া প্রমুখ।
গতকাল গণশুনানিতে ১০টি অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল ওষুধের অতিরিক্ত মূল্য, নার্স-আয়াদের ট্রলি-বাণিজ্য, চিকিৎসকের অবহেলা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চমেক হাসপাতালে সেবাগ্রহীতাদের অবহেলা ও অভিযোগ শোনার জন্য এই গণশুনানির আয়োজন শুরু করে।
গতকাল শুনানির সময় আলতাব হোসেন বলেন, ‘বহির্বিভাগ থেকে কিছু টেস্ট দিলে তা আমি হাসপাতাল থেকে করাই। কিন্তু গতকাল সকালে রিপোর্ট দেওয়ার কথা থাকলেও কেউ তা দিচ্ছে না। যেই টেবিলে যাই একজন আরেকজনকে দেখিয়ে দেয়। কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। তাই আমি সরাসরি গণশুনানিতে উপস্থিত হয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছি।’
পরে খবর নিয়ে জানা যায়, অভিযোগ দেওয়ার পর রোগনির্ণয় বিভাগ তাৎক্ষণিক তাকে রিপোর্ট দিয়ে দেয়।
চমেক হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালের সেবা ও চিকিৎসা নিয়ে কোনো অভিযোগ আমরা সহ্য করব না। ইতোমধ্যে জমা পড়া অধিকাংশ অভিযোগের যথাযথ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আমরা চাই সরকারি এই হাসপাতাল থেকে সাধারণ মানুষ প্রকৃত সেবা গ্রহণ করুক।’
একুশে/এটি