চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হচ্ছে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। ইতিমধ্যে নানা সরঞ্জাম সংগ্রহ করে বন্দরে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর কিছু সরঞ্জাম শিগগির বন্দরে যুক্ত হচ্ছে। দ্রুত শুরু হচ্ছে ড্রেজিং কার্যক্রম। চট্টগ্রাম বন্দরকে ‘ব্যবহারকারী বান্ধব’ বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য নেয়া হয়েছে স্বল্প, মধ্য ও দীয়মেয়াদী নানা পরিকল্পনা।
চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বন্দর চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ এসব কথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সি মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, খোলা পণ্য (কার্গো), কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি সামাল দেওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল আগের ২.৭৫ দিনের জায়গায় ২.৫৮ দিনে নেমে এসেছে। বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে আগের চেয়ে বহুগুন বেশী। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ২৬ লাখ টিইউস কন্টেইনার এবং প্রায় সাড়ে ৮ কোটি কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
তিনি বলেন, সরকারের দিকনির্দেশনায় নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) জন্য হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করে পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে নয়টি রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন, চারটি স্ট্র্যাডেল কেরিয়ার, পাঁচটি কনটেইনার মুভার, একটি রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহ করে বন্দরের ইক্যুইপমেন্ট ফ্লিটে সংযুক্ত করেছি। তিনটি স্ট্র্যাডেল কেরিয়ার শিপমেন্ট করা হয়েছে, শিগগির বন্দরে পৌঁছবে। এ ছাড়া ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। বন্দরের অভ্যন্তরে এবং বর্হিনোঙরে ১১ টি কোম্পানি নিয়মিত ড্রেজিংয়ের কাজ করছে। বন্দরের জেটিতে ৯.৫ মিটারের জাহাজ প্রবেশে কোন প্রকার সমস্যা হচ্ছেনা। পর্যায়ক্রমে সবগুলো জেটিতে বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৬টি শিপ টু শোর গ্যান্ট্রি ক্রেন, ২টি আরটিজি, ১টি মোবাইল হারবার ক্রেন সংগ্রহের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। ৪টি শিপ টু শোর গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহের দরপত্র মূল্যায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ৬টি আরটিজির এলসি খোলা প্রক্রিয়াধীন ও ৩টি আরটিজির দরপত্র মূল্যায়নাধীন আছে। ৩টি স্ট্র্যাডেল কেরিয়ার সংগ্রহের জন্য শিগগির চুক্তি সম্পাদন হবে।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বে টার্মিনাল এলাকাতে একটা ইয়ার্ড তৈরী করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে কনটেইনার খুলে জিনিস খালাস করা হয়। সেজন্য প্রচুর ট্রাক এখানে আসে। প্রচুর কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে থাকে। এবং জাহাজে কনটেইনার রাখতে ও নামাতে গিয়ে কনটেইনার রাখার জায়গা কমে যায়। এখন বে টার্মিনালের ভেতর যদি বড় একটা ইয়ার্ড তৈরী করি, আর ট্রাক টার্মিনাল তৈরী করি, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বে টার্মিনালে ট্রেলার আর ট্রেনের মাধ্যমে যদি কনটেইনারগুলো শিফট করি, আর ডেভিভারী কাজটা যদি বে টার্মিনাল দিয়ে সম্পন্ন করি, তাহলে কোন ট্রাক চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে না।
‘রাস্তাটা তখন ট্রাকমুক্ত হয়ে যাবে। ট্রাকের জট চলে যাবে। বন্দরের মধ্যে থেকে কনটেইনার জট কমে যাবে। মার্চ পর্যন্ত জাহাজের গড় অবস্থান হচ্ছে দুই দশমিক ৭৫ দিন, ওঠা তখন কমে আসবে ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টাতে।’
মতবিনিময় সভার শুরুতে লিখিত বক্তব্যে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ১৮৮৭ সালের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এক বছর পর ১৮৮৮ সালে পোর্ট কমিশনার্স অ্যাক্ট চূড়ান্তভাবে প্রণীত হয়। এ জন্য প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল বন্দর দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য কমডোর শাহিন রহমান, ক্যাপ্টেন খন্দকার আকতার হোসেন ও কামরুল আমিন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসআর/এএ/একুশে