মোরশেদ নয়ন : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই নরপশুর ধর্ষণ-চেষ্টা রুখে দিয়েছে ১৮ বছরের এক সংখ্যালঘু তরুণী। আর এটি করতে গিয়ে ওই তরুণীর নাক থেতলে গেছে, মুখে, গালে, ঘাড়ে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। রক্ত ঝরছে।
রোববার রাত ১০ টার দিকে কর্ণফুলি উপজেলাধীন, পটিয়া থানার বড় উঠান এলাকায় পাশবিক এ ঘটনা ঘটে। মেয়েটি বর্তমানে চমেক হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তরুণীটির বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার বটতলী গ্রামে। কর্মস্থলের সুবাদে থাকেন পটিয়া থানাধীন বড়উঠানের ঈদগা এলাকায় মামার বাড়িতে।
ভিকটিমের পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পশ্চিম পটিয়ার কলেজ বাজার এলাকায় ইনোভা গার্মেন্টসে কর্মরত এ তরুণী রোববার ডিউটি শেষে রাত ৯টার দিকে পায়ে হেঁটে মামার বাড়িতে ফিরছিলেন। এসময় ওৎপেতে থাকা ২ যুবক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। মেয়েটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসীম সাহসের সঙ্গে পাষণ্ডদের সেই চেষ্টা সফল হতে দেয়নি। তবে ধর্ষণচেষ্টা প্রতিরোধ করতে গিয়ে গুরুতর আহত হন এ তরুণী।
তরুণীটির সঙ্গে কয়েকদিন আগে পারিবিারিকভাবে সুজন কর্মকার নামে এক তরুণের বিয়ে ঠিক হয়। প্রতিদিন সর্বেোচ্চ রাত ৯টার মধ্যে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরেন ওই তরুণী। কিন্তু রোববার ১০টায়ও বাড়ি না ফেরায় মেয়েটির হবু বর ও পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। স্বজনেরা তার সন্ধানে বের হয়ে বাড়ির অদূরে রাস্তার ধারে ঝোপঝাড়ে মেয়েটির চিৎকার শুনতে পান। কাছে যেতেই দেখেন দুই যুবক দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এরপর তরুণীকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে ভর্তি করান তারা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. জহিরুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় রোববার রাত ১১টার দিকে তরুণীকে চমেক হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। মেডিকেল পরীক্ষায় তরুণীটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে তরুণীটির মুখে, ঘাড়ে, গলায় রক্তাক্ত জখমের সৃষ্টি হয়। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখনো কোনো মামলা হয়নি বলে জানান ওসি জহির।
বড়উঠানের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম একুশে পত্রিকাকে জানান, কর্মজীবী সংখ্যালঘু তরুণীটি তাঁর কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন। রাত ১০টার সময় তার বাসার অদূরে আসতে ২ জনে তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ধর্ষণে বাধা দিলে তাকে খুব মারধর করা হয়। এতে নাক, মুখ থেতলে যায়।
এদিকে কর্ণফুলী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবরাজ রতন ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী জানান।
চট্টগ্রাম ফাইট ফর উইমেন রাইটসের সভাপতি, নারীনেত্রী অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানু একুশে পত্রিকাকে বলেন, একজন তরুণীর কাছে তার জীবনের চেয়ে সম্ভ্রম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রক্ত দিয়ে সম্ভ্রম রক্ষা করে এ তরুণী সেটাই প্রমাণ করলেন, যা সমাজের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এতে তরুণীটির জীবনও চলে যেতে পারত। কিন্তু তরুণীটি সেদিকে পরোয়া করেননি। জীবনের বিনিময়ে ইজ্জত-আব্রু রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তার দৃঢ়তার কারণে ইজ্জত রক্ষা হলো, রক্ষা হলো জীবনও। আমি মেয়েটিকে স্যালুট জানাই।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন এই কমিশনার আরো বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের যুগে নারীদের কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার সময় নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এমন যুগে এসেও কেন নারীরা নিরাপদে পথ চলতে পারবে না, নির্বিঘ্নে বাসা কিংবা কর্মস্থলে যাতায়াত করতে পারবে না। এই দায়িত্ব কোনোভাবেই রাষ্ট্রযন্ত্র এড়াতে পারে না।
নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ধর্ষক-চেষ্টার সঙ্গে জড়িত দুই নরপশুকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান রেহানা বেগম রানু।
একুশে/এমএন/এটি