গোলাপ উপহার দিয়ে আইন মানার অনুরোধ

চট্টগ্রাম: হেলমেট পরেননি। তার ওপর মোটরসাইকেলের পেছনে নিয়েছেন অতিরিক্ত আরোহী। ছুটছেনও দ্রুতগতিতে। সেই মোটরসাইকেলের চালককে হাতেনাতে আটকাল পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা। তবে জেল-জরিমানা নয়। উল্টো লাল গোলাপ দিয়ে জানানো হয়েছে শুভেচ্ছা। পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে ট্রাফিক আইন মেনে চলার অনুরোধ করা হয়। আর যাদের মাথায় হেলমেট ছিল, তাদেরও শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে ফুল দিয়ে।

চট্টগ্রাম নগরের ফয়েস লেক মোড় এলাকায় রোববার দুপুরে এই উদ্যোগ দেখা গেল। একের পর এক মোটরসাইকেল থামিয়ে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার শাস্তি এবং হেলমেট না থাকায় দুর্ঘটনার কুফল তুলে ধরেন পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা। এরপর এখন থেকে হেলমেট ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দেন চালকরা।

এ উদ্যোগের পেছনে আছে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া ‘লিজেন্ডস অব ইয়ুথ’ নামের একটি দল। বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম (বিসিসিপি) এর আয়োজনে ও আমেরিকান দূতাবাস, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসি এবং চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহযোগিতায় দেড়মাসের ‘পুলিশ স্টুডেন্টস এনগেজমেন্ট’ ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে নগরের ইউএসটিসি’র ফার্মাসী ও ইংরেজি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা পুলিশের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। ওই ওয়ার্কশপ থেকে দলটি গঠন করা হয়।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল থামায় পুলিশ। তার মাথায় হেলমেট ছিল না। এরপরও পুলিশ কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অভিভূত হন ওই যুবক। তিনি পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের দেওয়া ফুল গ্রহণ করেন এবং ভবিষ্যতে সর্বদা হেলমেট পরার প্রতিশ্রুতি দেন।

দুপুর ১টায় প্রখর রোদে ফয়েস লেক মোড়ে একটি মোটর সাইকেল এগিয়ে আসতে দেখলেই সামনে এগিয়ে গেলেন কয়েকজন তরুণ ও পুলিশ সদস্যরা। তাদের হাতে থাকা গোলাপ ফুল দিয়ে হেলমেটপরা চালককে শুভেচ্ছা জানালেন তারা। ফুল হাতে পেয়ে ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন রীতিমতো অবাক। ধন্যবাদ দিলেন সবাইকে।

রোববার বেলা ১২টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ফয়েস লেক মোড়ে এ কার্যক্রমে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের পক্ষে পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন ‘লিজেন্ডস অব ইয়ুথ’ এর দলনেতা আমিমুল আহসান, সদস্য রাজীব দে, অনন্যা চৌধুরী, জয়া ভট্টাচার্য্য, সৈতক দাশ, ফারজানা আক্তার আলম, কাজী রিজভী আওয়াল, প্রান্ত বড়ুয়া প্রমুখ। শিক্ষার্থীদের সবাই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসি’র শিক্ষার্থী।

‘লিজেন্ডস অব ইয়ুথ’ এর দলনেতা আমিমুল আহসান বলেন, ‘ট্রাফিক আইনের প্রতি বেশিরভাগ মানুষ খুবই উদাসীন। শুধু সচেতনতার অভাবে তারা ট্রাফিক আইন মানেন না। তাই মানুষকে সচেতন করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।’

‘লিজেন্ডস অব ইয়ুথ’ এর সদস্য জয়া ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরীর মাধ্যমে ভালো কিছু করতে চাই আমরা। তাই ট্রাফিক আইন মানার বিষয়ে আমরা একসঙ্গে সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালন করেছি।’

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘মোটরসাইকেলের চালকদের জীবন নিরাপদ করার জন্য হেলমেট ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। মোটরসাইকেলের চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে আমরা ট্রাফিক আইন মেনে চলার বিষয়ে চালকদের উৎসাহিত করেছি, যাতে পরবর্তীকালে অন্তত শিক্ষার্থীরা আর এ ভুল না করেন।’

এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় ফয়েস লেক এলাকায় শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যরা মিলে জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভটিজিং, নারী ও শিশু নির্যাতন, যৌতুক ও বাল্য বিবাহবিরোধী র‌্যালি বের করেন। এরপর ইউএসটিসি প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব উদ্যোগে নগরের খুলশী থানার পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সহযোগিতা দেয়।

এসআর/একুশে