রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

নবজাতক বদল : রহস্যজট যেভাবে খুলল

প্রকাশিতঃ ১৯ এপ্রিল ২০১৮ | ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরের গোলপাহাড় মোড়ের চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে মেয়েসন্তান বদলে মৃত ছেলেসন্তান তুলে দেওয়ার ঘটনার রহস্যের জট খুলতে গিয়েছিলেন পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর।

রহস্য উদ্ধারের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পাঁচদিন বয়সী সিভিয়ার নিউমোনিয়া আক্রান্ত নবজাতক বদলের অভিযোগ পাওয়ার পর মনে প্রশ্ন এসেছিল, সংকটাপন্ন এই বাচ্চাকে কেন কেউ পাচার করবে? কেননা যারা চুরি হওয়া বাচ্চাটি কিনে নেবে তারা তো সুস্থ বাচ্চাই নিতে চাইবে।’

পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘অভিযোগটি তদন্ত করতে মঙ্গলবার গভীর রাতে একা সাদা পোশাকে বেরিয়ে পড়লাম। চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম, আইসিইউ’তে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) একটি মেয়েসন্তান জীবিত আছে। তখন আইসিইউ’র সামনে এক নারী বসে আছেন, ভেতরে তার ছেলে সন্তান বেঁছে আছে মনে করে। ওই নারীর সাথে কথা বললাম।’

‘তিনি তখন জানালেন, তার দুটি ছেলে ছিল, সেগুলো মারা গেছে। পরে দুটি মেয়ে হয়েছে। এখন আল্লাহ তাকে একটা ছেলে দিয়েছে, সেই ছেলেটা এখন অসুস্থ। তখনই নিশ্চিত হলাম, বদল হয়ে নোয়াখালী চলে যাওয়া ছেলেসন্তানটি তারই। কারণ আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন থাকা নবজাতকটি মেয়ে ছিল।’

পুলিশ কর্মকর্তা ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘১০ মিনিটের ব্যবধানে নোয়াখালী থেকে আনা একই বয়সের দুটি নবজাতককে আইসিইউতে রাখতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল করে ফেলেছে। আইসিইউতে স্বজনদের প্রবেশের নিয়ম না থাকায় শুরুতেই বিষয়টি ধরা পড়েনি।’

‘এরপর হাসপাতালে থাকা মেয়ে নবজাতকটিকে ভোররাতে তার মা রোকসানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর মৃত ছেলে সন্তানটিকে তাদের প্রকৃত অভিভাবককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তারা তখন ক্ষুব্ধ হন। অনেক সতর্কতার সঙ্গে এটা সমাধান করেছি আমরা।’ যোগ করেন ওয়ালী উদ্দিন আকবর।

পুলিশ সূত্র জানায়, ১৩ এপ্রিল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাসিন্দা ও প্রবাসীর স্ত্রী রোকসানা আক্তার এক মেয়ে নবজাতকের জন্ম দেন। নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ায় আধাঘন্টার মধ্যেই বাচ্চাটিকে নোয়াখালী মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ছয় ঘন্টা পর সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ যে কোনো উন্নত হাসপাতালে নবজাতকটিকে রেফার করা হয়। এরপর ওই বাচ্চাকে ১৩ এপ্রিল রাত দেড়টায় আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে একদিন রাখার পর শুক্রবার তাকে ভর্তি করা হয় চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে।

এরপর গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই নবজাতক মারা গেছেন। এরপর বেগমগঞ্জে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দাফনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে তারা দেখতে পান নবজাতক ছেলেসন্তান। এরপর ওই নবজাতককে নিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে তারা পাঁচলাইশ থানায় এসে অভিযোগ করেন।

চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেন, এ ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।

এসআর/একুশে