জঙ্গিদলে থেকে রেডক্রসে চাকরি

চট্টগ্রাম: মো. মুনতাসিরুল মেহের, ২৬ বছর বয়সী এক যুবক। গতকাল শুক্রবার রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানার আনন্দবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুনতাসিরুলসহ সাতজনকে র‌্যাব সদস্যরা গ্রেফতার করে।

র‌্যাব বলছে, ২০১৩ সাল থেকেই জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন মুনতাসিরুল। তিনি ২০১৫ সালে ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করেছেন। এখন কক্সবাজারে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দি রেডক্রসের (আইসিআরসি) ফিল্ড অফিসার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি।

২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী আফগানিস্তানে আইএস জঙ্গিদের গুলিতে রেডক্রসের ছয় কর্মী নিহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর আফগানিস্তানের সব ধরনের ত্রাণ কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করেছিল রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি।

জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার মুনতাসিরুল মেহের কোতোয়ালী থানাধীন রাবেয়া রহমান লেইন নূর আহম্মদ রোড়ের ৬৯৯/এ বেড়ে উঠেছেন। তার বাবার নাম মো. ছাদতুল মেহের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের দিকে হঠাৎ করেই মুনতাসিরুল ধর্মের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন। একই সাথে গ্রেফতার হওয়া তামিম তাকে জঙ্গিদলে নিয়ে গেছে। তামিম জঙ্গিবাদে জড়ান আরও অনেক আগে, ২০১১ সালের দিকে। তামিমের ভাই তাফিমও জঙ্গিদলে আছে। তামিমের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আছে বলেও তথ্য পেয়েছি। এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।

এদিকে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে কীভাবে কিশোর-যুবকদের মাথা বিগড়ে দিচ্ছে, তা ফের ওঠে এসেছে জঙ্গি সন্দেহে সাত যুবককে গ্রেফতারের পর।

র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারি পরিচালক মিমতানুর রহমান বলেন, হোয়াটস অ্যাপে দ্বীন ফোর্স এক্সট্রিম ও ইখোয়ান নামের নামে দুটি গ্রুপে সক্রিয় থেকে জিহাদি ভিডিও ও বিভিন্ন দেশের মুসলিম নর-নারীদের উপর নির্যাতনের ছবি প্রচার করে নিজেদের কথিত জিহাদের জন্য প্রস্তুত করছিল। এ ছাড়াও তারা জঙ্গি সংগঠন আইএসকে অনুসরণের চেষ্টা করে।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে আসকার দিঘীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত আতরজান জামে মসজিদে ইবনে মোস্তাক এর সাথে তাদের পরিচয় হয়। এবং তারা মোস্তাকের মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতায় উৎসাহী হয়ে ওঠে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ ও এ দেশীয় সমমনা জঙ্গিদের একত্র করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করার কাজে লিপ্ত ছিল।

গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন- মো. মহিউদ্দিন তামিম (২৯), মো. আফজার হোসেন (২১), মো. ইমরান খান (২৭), মো. দাউদ নবী পলাশ (২৮), চৌধুরী মোহাম্মদ রিদওয়ান (২৭) ও এসএম জাওয়াদ জাফর (২৬)। দাউদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়, অন্যদের বাড়ি চট্টগ্রামে।

এদের মধ্যে মহিউদ্দিন তামিম ২০১৭ সালে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করেন। আফজার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ইমরান বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিবিএস কোর্সে অধ্যায়নরত। দাউদ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করে প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেডে কাজ করেন।

রিদওয়ান ২০১১ সালে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ঢাকায় ভর্তি হন কিন্তু ২০১৩ সালে তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বহিস্কৃত হন। জাওয়াদ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চট্টগ্রাম ইপিজেডে ইয়ংওয়ান নামে একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত।

তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল জব্দ করার কথা জানিয়ে এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের হয়েছে বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা।

এসআর/একুশে