”অবৈধ উপার্জনকারী ব্যক্তি নানা সমস্যায় ভোগে, ব্যাংকক-সিংগাপুরে বাইপাস করে”

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, ”১৯৮০ সালের দিকে মাদক বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করে। তখন ছিল মরফিন, প্যাথেডিন ও হেরোইন। বর্তমানে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুবক, বৃদ্ধ, ছাত্র ও শিশুদের স্পর্শ করে যাচ্ছে। মাদকসেবনের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যহানিও ঘটছে। পরিবারের কোনো ব্যক্তি বা সন্তান যদি মাদকাসক্ত হয়ে উঠে তাহলে ঐ পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। এক সময় সারাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধ টাকা আয় করে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন। আবার অনেকে সৎভাবে চাকরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনযাপন করেছেন। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন জীবনযাপন ও বিলাসিতা উচিত নয়। দুর্নীতির টাকা কোনো কাজে লাগে না, নিজেরাও ভোগ করতে পারে না। অবৈধভাবে উপার্জন করা ব্যক্তি শারীরিক অসুস্থতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে। তারা ব্যাংকক, মালয়েশিয়া ও সিংগাপুর গিয়ে বাইপাস সার্জারির পাশাপাশি জটিল অপারেশন করে আসে। দেশে কোনো দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি সুস্থ নেই। তাই নিজেকে ও সন্তানদের সুস্থ রেখে মাদক ও দুর্নীতির কবল থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে।”

সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের অধীন মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শক, তদুর্দ্ধ কর্মকর্তাদের আইন ও অফিস ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ৪ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অফিস সহায়ক থেকে শুরু করে আমরা প্রত্যেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করতে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। সরকার তাদের জন্য বেতন-ভাতা (উৎসব ভাতাসহ) ও চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন। এর মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে দুর্নীতি করা যাবে না। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু দেশের আনাচে-কানাচে মাদকের যে উত্থান ঘটেছে তা জঙ্গিবাদের চেয়ে অনেক বেশি হুমকি। আমাদের দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে নিজের পরিবার ও সমাজ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। পাশাপাশি দেশ থেকে মাদকনির্মূলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সৎ ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। মাদক যেন আমাদের গ্রাস করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মোসা. রোকেয়া পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আক্তার হোসেন ও বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক একেএম শওকত ইসলাম ও অধিদপ্তরের মেট্রো উপ-অঞ্চলের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ।
এটি/একুশে