আবু আজাদ : চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের কারণে যাত্রীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ট্রেনযাত্রা। রেল লাইনের পাশে গড়ে ওঠা বস্তি থেকে খেলার ছলে কিংবা দুর্বৃত্তরাও এই পাথর নিক্ষেপ করে। এতে প্রায়ই যাত্রীদের পাশাপাশি আহত হচ্ছেন চালকও। সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ নিয়েও চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধ করা যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, রেলওয়ের পূর্ব এবং পশ্চিম জোনে পাথর নিক্ষেপ করা হয় এমন ২৬টি এলাকা চিহ্নিত করেছে জিআরপি পুলিশ।
সোমবার (২ এপ্রিল) রাতে রাজধানী ঢাকার কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মেইল ট্রেনে ছোড়া পাথরে চোখে গুরুতর জখম হয়েছেন চট্টগ্রাম বোয়ালখালী পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জহিরুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘মেইল ট্রেনের কেবিনে উঠেছিলাম। জানালাটি আগে থেকে খোলা ছিল। গরমের কারণে আমিও আর বন্ধ করিনি। কমলাপুর থেকে ট্রেনটি ছাড়ল। পাঁচ-সাত মিনিট চলল। এরপর হঠাৎ একটি পাথর এসে লাগল চোখে। কপাল ফেটে রক্ত পড়তে লাগল। চোখ তো ভীষণ যন্ত্রণা করছে। রুমাল দিয়ে চেপে ধরলাম। এত বড় একটি ট্রেন কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা বলতে কিছুই পাইনি।’
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। দীর্ঘ এই যাত্রাপথে অন্তত ২৬টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে প্রতিনিয়ত পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ১১টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে প্রায়ই পাথর নিক্ষেপ করা হয়।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলেও ১৫টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। নানা ব্যবস্থা নিয়েও পাথর নিক্ষেপ বন্ধ না হওয়ায় এসব পয়েন্ট দিয়ে রেল চলাচল ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। পাথর নিক্ষেপ দিন দিন বাড়তে থাকায় আতংকে রয়েছেন রেলযাত্রীরা।
ব্যবসার কাজে নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ি নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রেনে যাতায়াত করি নিরাপদ বলে। কিন্তু ট্রেনের মধ্যে কোনো ইনজুরি হলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসার সুযোগ পাই না। পাথর নিক্ষেপ রোধে আরও সচেতনতা বাড়ানো দরকার।’
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনে প্রতিনিয়িত এলোপাতাড়ি ইট-পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। আসা-যাওয়ার পথে শাটলে ইট পাথর নিক্ষেপের ঘটনা এখন শিক্ষার্থীদের শঙ্কিত করে তুলেছে। এটা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। আর এসব কারণে শাটল ট্রেন চবি শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।
বিশ্বদ্যিালয় প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম বটতলী রেল স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করা শাটল ট্রেনে একাধিক স্থান থেকে ইট-পাথর নিক্ষেপ করা হয়। তার মধ্যে বিবির হাট, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, ষোল শহর, ঝাউতলা এলাকা অন্যতম।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘জিআরপি ও আরপি তৎপর আছে। যেখানে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে, সেখানেই তারা গিয়ে লোকজনদের বুঝিয়ে বলছে যেন পরবর্তীতে আর কেউ পাথর নিক্ষেপ না করে। এজন্য মোটিভেশনাল স্পিচ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক জায়গা থেকেই অনেককে আটক করা হয়েছে।’
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে- খেলার ছলে শিশু-কিশোররা যেমন পাথর নিক্ষেপ করে, তেমনি নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে সুবিধা নিতে দুর্বৃত্তরাও পাথর নিক্ষেপ করছে। এ অবস্থায় পাথর নিক্ষেপের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করার পর দ্রুত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সবশেষ মাসিক সমন্বয় সভায় বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
একুশে/এএ