আবু আজাদ : ‘স্বামী থাইকাও নাই। সন্তানরা খবর নেয় না। বাবার মাজারে পইরা থাকি। যা পাই তা নিজে খাই, ময়না আর চড়াইরে খাওয়াই। ওরা পাখি হইলেও আমারে ভালোবাসে।’
কথাগুলো রেখা বেগমের (৪৫)। চট্টগ্রাম নগরীর গনিবেকারী এলাকার মিসকিনশাহ’র মাজারে আশপাশে প্রায় দেখা যায়। সঙ্গে থাকে একটি পাখির খাঁচা। খাঁচায় রয়েছে একটি ময়না ও একটি চড়ুই পাখি। কারো কাছে কিছু চান না, মাজারে আসা ভক্ত বা পথচারিরা খুশি হয়ে কিছু দিলে তা নেন। নিজে খান, খাওয়ান বোবা পাখি দুটিকে।
রেখার কথায়, ‘পাখি ওরা সত্য, তয় তারা সব বোঝে। আমার দুঃখ বোঝে ওরা। যখনই কিছু পাই, সে সব পাখিগুলার সাথে ভাগ করে খাই।’
রেখা জানান, বরিশালের মেয়ে তিনি। অনেক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে এসেছিলেন চট্টগ্রামে। একসময় রেখার সংসার ছিলো। স্বামী-সন্তানরা সঙ্গে থাকতো। তিনিও টুকটাক কাজ করতেন। তবে এখন কেউ নেই। স্বামী কোনো খোঁজ নেয় না। সন্তানেরা বিয়ে করে আলাদা থাকে। চন্দনপুরার আশেপাশে কোনো একটা বস্তিতে থাকেন। নাম জানাতে পারলেন না।
অভিমান ভরা কন্ঠে রেখা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে কেউ কারো না। যার জন্য দেশ ছাড়ছি, সেও নাই। নিজে না খাইয়া যাদের খাওয়াইছি তারাও নাই। তাই পাখিরে খাওয়াই। অরা বেইমানি করো না। ছায়রা যায় না।’
এ ময়না কোথায় পেলেন ? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে রেখা বলেন, ‘কারেন্টের সর্ট খাইছে। মইরা যাইতে লইছিলো। কুড়াই নিছি। একটা পাউ নষ্ট হই গেছে। এহন এক পাউয়ে খাড়াইয়া থাকে। তয় খুব ভালা পাখিডা। কয়দিন আগে আরো একটা চড়াই পাইছি। মাজারের ধারে। অরেউ আইনা রাখছি। ময়না-চড়াই এক লগে থাকে। খায়তে দিলে খায়, না খাইতে পাইলে ফেল ফেল কইরা খালি চাইয়া থাকে।’
মিসকিনশাহ’র মাজারের সহকারী খাদেম মাওলানা জামাল একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে এসে একটা বস্তা পেতে মাজারের সিঁড়ির কাছে বসে থাকেন এই মহিলা। মাজারের ভক্তরা বিভিন্ন সময় নানান কিছু নিয়ে আসেন। অন্য সব ফকির-মিসকিনদের মত তাকেও এসব খাবার দেওয়া হয়। ভাত বা রুটি জাতীয় কিছু পেলে তিনি তা পাখিদেরও খাওয়ান নিজেও খান।’
একুশে/এএ