আবু আজাদ : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পরও তাঁর চশমা হিলের বাসভবনে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন চার সদস্যের পুলিশ।
দামপাড়া পুলিশ লাইনের তিন কনস্টেবল ও পাঁচলাইশ থানার একজন এএসআই দুই শিফটে তাঁর বাসভবনে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন। রাতের বেলা একটি পুলিশ ভ্যান অপেক্ষমাণ থাকে তার বাসভবনের সামনে।
১৯ মার্চ রাত ১০ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনের সামনে সীমানা প্রাচীরের মধ্যে সশস্ত্র তিন পুলিশ কনস্টেবল ডিউটি করছেন। গেইটের কাছে একটি পুলিশভ্যান নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন পাঁচলাইশ থানার এএসআই জামাল হোসেন। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় একুশে পত্রিকা প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মহিউদ্দিন চৌধুরী বাসভবনে উপরের ইচ্ছা ও নির্দেশে পুলিশ-পাহারা চলছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দুই শিফটে আমরা চারজন পুলিশ এই দায়িত্ব পালন করি। এর মধ্যে তিন কনস্টেবল আসে দামপাড়া পুলিশ লাইন থেকে।
এখন তো মহিউদ্দিন চৌধুরী নেই, তবুও কেন এই পুলিশ-পাহারা জানতে চাইলে এএসআই জামাল হোসেন বলেন, ‘আমি সঠিক বলতে পারব না। তবে যতটুকু জানি, এখনো অনেক নেতা-কর্মীর আনাগোনা এই বাড়িতে। বিভিন্ন কর্নার থেকে আসা কর্মীদের মধ্যে অনেকসময় চিৎকার, চেঁচামেচি হয়; হাতাহাতিও হয় কখনো কখনো। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য হয়তো এই পুলিশী পাহারা। বলেন এএসআই জামাল হোসেন।
জানা যায়, মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৭ বছর মেয়র থাকাকালে এই বাড়িতে পুলিশের একটি টিম পাহারার দায়িত্ব পালন করত। ২০১০ সালের জুন মাসে মেয়র নির্বাচনে পরাজিত হলেও পুলিশ পাহারার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের কর্মচারীসহ নানা সুবিধা বহাল ছিল এই বাড়িতে। বিএনপি সমর্থিত মেয়র মনজুর আলম এসব সুবিধা বজায় রাখলেও আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবন থেকে সিটি করপোরেশনের প্রাপ্য সকল সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করে নেন।
কিন্তু যথারীতি বাড়িতে পুলিশ-পাহারা এবং নিজের চলাচলের সময় পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার করতেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। সরকারের মন্ত্রী, মেয়র কিংবা এমপি না হয়েও পুলিশ নিয়ে চলাচলের বিষয়টি মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবদ্দশাতেই ভালোভাবে নেননি অনেকে।
তাঁর মৃত্যুর পরও জনগণের টাকায় বেতনভোগী সরকারের চার পুলিশ এবং একটি গাড়ি কেন তার বাসভবন পাহারা দেবে সে প্রশ্ন এখন নতুন করে দেখা দিয়েছে।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এদেশে সবকিছুই সম্ভব। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। মহিউদ্দিন চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। সে হিসেবে জীবদ্দশায় তাঁর নিরাপত্তার স্বার্থে বাসভবনে পুলিশ থাকতে পারে। কিন্তু তিনি প্রয়াত হবার পরও তাঁর বাসভবনে কেন পুলিশ-পাহারা থাকবে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এর জবাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা আইজিপি ভালো দিতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে রোববার (১লা মার্চ) সকাল থেকে আজ রাত পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তার ব্যাক্তিগত সহকারী বা অন্য কেউ ফোন রিসিভ করেছেন। তারা বলেন, ‘স্যার ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলুন।’
পরে একুশে পত্রিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি এমপি’র সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আসলে ব্যপারটা আপনি বললেন, আমি জানলাম। বিষয়টা আমার একেবারেই জানা ছিলো না। আগেইবা কেন ছিলো, হয়তো সে ভাবেই ছিলো। কিন্তু নরমালি থাকে না। তবে যদি কেউ চায় কখনো, স্পেশাল কোনো বিবেচনায় সরকার অ্যালাউ করে, বিষয়টা আমার জানা নাই। আপনি কয়েকদিন পরে আমাকে ফোন করেন, এর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আমি জেনে নেব-এটা কেন কন্টিনিউ হচ্ছে।কোনো কারণ আছে কিনা বা তারা কোনো সাহায্য চেয়েছে কিনা।’
এদিকে সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আবদুল ওয়ারিসের কাছে জানতে চাইলে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ওখানে এক সময় আরো বেশি পুলিশ থাকতো। এখন অনেক কমে এসেছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবদ্দশা থেকে এটি হয়ে আসছিলো। ওখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা আসেন। নানা ধরনের লোক সমাগম হয়। যেখানে লোক সমাগম হয় সেখানে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ থাকে। তারই অংশ হিসেবে, এখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মোবাইল টিম পাঠিয়ে তদারকি না করে, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি টিমকে সেখানে নিয়মিত রাখা হয়েছে।’
তবে লোক সমাগম আগের চাইতে কমে আসছে জানিয়ে উপ পুলিশ কমিশনার আবদুল ওয়ারিস বলেন, ‘এখন লোকজন আগের চাইতে কমে গেছে, স্বাভাবিকভাবেই আমরাও বিবেচনা করছি সেখানে আর পুলিশ পাঠাবো কিনা’
গতবছরের ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
একুশে/এএ/এটি