নিজস্ব প্রতিবেদক : রাষ্ট্রের সর্বত্র অসমতা বিরাজ করছে দাবি করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ড. মঞ্জুরুল আমিন চৌধুরী বলেছেন, ‘তরুণরা কোটা-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছ।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে যখন সেই পুরোনো ধ্যান-ধারণাকে ধারণ করার কথা বলা হয়, তখন আমাদের তরুণরা স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়। তোমরা তরুণরা কোটাসন্ত্রাসের শিকার হয়েছ।’
বুধবার (২৮ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে অ্যাকটিভ সিটিজেনস রিজিওনাল এচিভারস সামিট ২০১৮ আসরে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্রিটিশ কাউন্সিল ও দি হাঙ্গার প্রজেক্টের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
মঞ্জুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘তরুণরা আজ দেশে থাকতে চাইছে না। তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। আমাদের সমাজে অসমতা সর্বত্র। সেটা ধনসম্পদের ক্ষেত্রে যেমন, সেটা ক্ষমতার ক্ষেত্রেও তেমন। তরুণদের মধ্যে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস নেই। তাদের চেহারায় গভীর চিন্তার ছাপ। অনেকের কপালে রেখা পড়ে গেছে। এটার কারণ হচ্ছে তারা চাপে আছে।’
তিনি বলেন, ‘যে দেশে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ৫৫ শতাংশ কোটা হয়, সে দেশে কী কারণে তরুণরা দেশে থাকবে? তরুণরা দেশে থাকার কোনো কারণ তো নেই। আমরা তরুণদের জন্য তরুণবান্ধব একটা বাংলাদেশ করতে পারি নাই। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল, বাংলার কৃষক, বাংলার শ্রমিক, বাংলার সর্বস্তরের জনগণ।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে তরুণরা সবচাইতে বেশি আত্মহুতি দিয়েছে। তারা যে বাংলাদেশ চেয়েছে, সে বাংলাদেশ কি আমরা পেয়েছি? এসময় তিনি সেই বাংলাদেশ পাওয়ার জন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান।
বক্তব্য শেষে তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে জাতীয় কবি নজরুলের কবিতা ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ এর দুটি চরণ- ‘কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যততুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার’ আবৃত্তি করেন।
উল্লেখ্য,গত ২১ মার্চ পটিয়ার জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটাব্যবস্থা থাকবে জানিয়ে বলেন, ‘কোটা ব্যবস্থা রাখতেই হবে কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।’
প্রধান অথিতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কোনো দেশে নেতৃত্ব কিন্তু আমদানি করা হয়না। এই যে আমাদের শিক্ষিত তরুণ সমাজ, সমাজের দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি জিনিস কিন্তু একটি বন্ধনের মধ্যে থেকে হলে তা সফলতা পায়। এই সংগঠনাটি সম্পর্কে আমার জানা ছিলো না। তারা যেভাবে প্রতিষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা আগামীতে জাতির জনকের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে।
চট্টগ্রাাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) এর সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল বলেন, ‘আমি স্বাগত জানাচ্ছি আগামীর বাংলাদেশকে। এখানে অনেকগুলো তরুণ মুখ। যারা আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন, কাজ করছেন। আমরা আসলে একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমন ক্রান্তিকাল, এ ক্রান্তিকালের কথা বলা যায় না। এ ক্রান্তিকাল অনুভব করতে পারি কিন্তু স্বীকার করতে পারি না। এ অন্ধকার আমরা দেখি, কিন্তু সবসময় অন্ধকারে থাকলে আলো আর অন্ধকারের পার্থক্য বোঝা যায় না। সেরকম একটি অন্ধকার এখন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্রান্তিকাল কীসের, এ ক্রান্তিকাল নৈতিকতার, এ ক্রান্তিকাল আদর্শের। আমরা কোন বাংলাদেশ চাই, তা ঠিক করতে পারি না। কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশের চিন্তা বঙ্গবন্ধু আমাদের চিন্তায় ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো সে বাংলাদেশ। আমরা সে বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে বাংলাদেশে কেউ অনাহারে থাকবে না। আমরা সে বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে কৃষকের মুখে হাসি থাকবে। আমরা সে বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে আমাদের সন্তানরা স্কুল থেকে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবে।’
ব্রিটিশ কাউন্সিল চট্টগ্রামের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এম জহির উদ্দিন বলেন, ‘২০০৯ সালে শুরু করা এ কার্যক্রম আজ দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে সফলতা পাচ্ছে। যুবকদের সাথে নিয়ে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষে আমাদের এ যাত্রা। বর্তমানে আমাদের সামনে এসে দাড়িয়েছে এক ভিন্ন বিশ্ব। এই প্রজেক্ট তরুণদের দেশের ও বিশ্ব ইস্যুতে আলোচনার, বোঝার সুযোগ করে দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে নেতৃত্ব আসবে এই তরুণদের মধ্যে থেকেই।’
অনুষ্ঠানে নারীনেত্রী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন কমিশনার অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানু, রওশন বুটিকসের সত্ত্বাধিকারী, ফ্যাশন ডিজাইনার রওশন আরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
একুশে/এএ