শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

হেফাজত আমীরের তবলিগ কমিটি : মাদানি মসজিদে উত্তেজনা, পুলিশ-পাহারা

প্রকাশিতঃ ২২ মার্চ ২০১৮ | ৯:৪২ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে তাবলিগ জামাতে বিভক্তির ঢেউ অবশেষে আছড়ে পড়লো চট্টগ্রাম নগরীর লাভলেইন তাবলিগ মসজিদে।

হেফাজতে ইসলামের আমীর মাওলানা আহমেদ শফির অনুসারী একটি তাবলিগ গ্রুপ বিশ্ব তাবলিগের আমীর মাওলানা সাদ কান্ধলভীর নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা এনে ৮ সদস্যের শূরা কমিটি গঠন করে বৃহস্পতিবার লাভলেইন মসজিদে প্রবেশের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে।

পুলিশের হস্তক্ষেপ ও পাহারায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও দুইপক্ষের মাঝে উত্তেজনা চলছে। রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিপুল সদস্য লাভলেইন মাদানি মসজিদ ঘিরে অবস্থান করছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বরাবরে লাভলেইন মাদানি মসজিদ তবলিগ মার্কাসে বহিরাগত হস্তক্ষেপ ও শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা করে একটি আবেদন করে মসজিদের বর্তমান শূরা কমিটি।

আবুল কালাম আজাদ ও আবদুল হালিমের করা আবেদনে বলা হয়, হাটহাজারী মাদ্রাসার মাওলানা আহমেদ শফির আহ্বানে বুধবার (২১ মার্চ) অনুষ্ঠিত বৈঠকে ৮ সদস্যের শূরা কমিটি গঠন করে তাদেরকে লাভলেইন মারকাযের মজলিসে শূরার বর্তমান সদস্যবৃন্দের সাথে সংযুক্ত করতে বলা হয়।

এছাড়া যতদিন পর্যন্ত দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে লিখিত আস্থা প্রকাশ করবে না এবং নিজামুদ্দীন মারকাযের ব্যাপারে কোনো আলোচনা করা যাবে না এবং নিজামুদ্দীনে কাউকে পাঠানো যাবে না এবং বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) বাদ আছর থেকে লাভলেইন মারকাযে উলামা-মাশায়েখ এবং তাবলিগী সাথীদের জোড় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানিয়ে তাতে সবাইকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ সম্বলিত রেজুলেশন বুধবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

এ অবস্থায় লাভলেইন মারকাযের মজলিসে শূরা সদস্য ও তাদের অনুসারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তারা পুলিশ কমিশনারের সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করে। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে লাভলেইন মাদানি মসজিদের সামনে ও আশপাশে পুলিশ এসে অবস্থান নেয়।

সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন একুশে পত্রিকাকে বলেন, তাবলিগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ও মুখোমুখি অবস্থানের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করেছি। পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, বর্তমান শূরা কমিটির বিপরীতে হাটহাজারী মাদ্রাসার মাওলানা শফি সাহেবের অনুসারীরা আরেকটি শূরা কমিটি গঠন করে মাদানি মসজিদে প্রবেশ করার ঘোষণা এবং এতে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় বর্তমান শূরা কমিটির সদস্য আবদুল হালিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এর প্রেক্ষিতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে ঘটতে না পেরে সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করে।

ভারতের দিল্লির মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (রহ.) ১৯২০-এর দশকে তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন। এর উদ্দেশ্য ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধের প্রচার। বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে তাবলিগে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয় না। এর মূল মারকাজ দিল্লিতে। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ নেতৃত্বে আসেন। তাঁর মৃত্যুর পর ইউসুফের ছেলে মাওলানা সাদ কান্ধলভী আমির হন।

তাবলিগ জামাত সূত্র জানায়, মাওলানা সাদ ১৯৮৯ সাল থেকে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় আসা শুরু করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি ইজতেমায় বয়ান করে আসছেন। গত দুই বছর তিনি আমবয়ানের পাশাপাশি আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন।

হজরত মুসা (আ.) এবং কোরআন শিক্ষার বিনিময় নেওয়া নিয়ে মাওলানা সাদ-এর বিতর্কিত দুটি বক্তব্যের অভিযোগে এবার তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে তাবলিগ জামাতকেন্দ্রিক আলেম সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই বিভক্তির প্রকাশ ঘটে এবার বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে তাঁর ঢাকায় আসার পর। বিভক্ত গ্রুপ বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদের অংশগ্রহণ ঠেকানোর ঘোষণা দেন। একপর্যায়ে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ না গ্রহণ করে ঢাকা থেকেই দিল্লিতে ফিরে যেতে বাধ্য হন মাওলানা সাদ।

মাদানি মসজিদ শূরা কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, মাওলানা সাদের যে বক্তব্যের কারণে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, সে ব্যাপারে ইতিপূর্বে তিনি লিখিত ও মৌখিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে আস্থাশীল হয়ে ইতিমধ্যে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মোহতামিম (অধ্যক্ষ) আবুল কাসেম নোমানী মাওলানা সাদকে চিঠি দিয়েছেন। এরপরও একটি পক্ষ দেওবন্দ মাদ্রাসার দোহাই দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এ ব্যাপারে মাওলানা আহমেদ শফি অনুসারী তাবলিগ গ্রুপটির বক্তব্য জানা যায়নি।