চট্টগ্রাম : দলীয় অফিস কিংবা স্থানীয়ভাবে কোথাও নয়, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয়েছে শহরের একটি মিষ্টির দোকানের কার্যালয়ে।
গত বুধবার ১৪ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের চৌমুহনীস্থ বনফুল মিষ্টির দোকানের তৃতীয়তলায় এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বনফুলের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দীন চৌধুরী, সহ সভাপতি মূদৃল দাশ, এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, হোসেন কবির, চেয়ারম্যান রমজান আলী, আহমদ মিয়া, আকতার হোসেন চেয়ারম্যান, ইউনুচ খোকন, তাপস দত্ত, মো. রিদোয়ান, মাহবুব সিকদার প্রমুখ।
এদিকে, আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের একটি সাংগঠনিক ইউনিটের বর্ধিত সভা বনফুল কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
রাজনৈতিক বোদ্ধাদের অভিমত, ‘রাজনীতি যে রাজনীতির জায়গায় নেই, দুর্বৃত্ত ও সওদাগরদের হাতে রাজনীতি বন্দী হয়ে আছে এটি তারই জ্বলন্ত উদাহরণ। সওদাগর কিংবা মিষ্টিব্যবসায়ীরা যখন রাজনীতির শীর্ষপদ দখল করবেন, তখন সংগঠনের নিয়ম-শৃঙ্খলা, ঐতিহ্য ভূলুণ্ঠিত করবেন, সওদাগরী স্টাইলে সংগঠন চালাবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ দলের সম্মান, মর্যাদা তাদের কাছে বড় নয়, দলের পদ-পদবী হাতিয়ে উদগ্র বাসনা পূরণ করাই তাদের মূল লক্ষ্য।’
সাতকানিয়ার সন্তান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন মিষ্টির দোকান বলে আমি তাচ্ছিল্য করতে চাই না। তবে কারো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দলের বর্ধিত সভা হতে পারে না, হওয়া উচিতও নয়। বড়জোর সভাপতি-সেক্রেটারির বাসভবনে হতে পারে!
সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী একুশে পত্রিকাকে বলেন, দলীয় কার্যালয় না হলে স্থানীয়ভাবে কোনো কমিউনিটি সেন্টারে, রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে দলের বর্ধিত সভা হতে পারে। তাই বলে কোনো মিষ্টির দোকানে দলের বর্ধিত সভার আহ্বান অশোভন, লজ্জাজনক।
আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হলেও সাতকানিয়া আ.লীগের কোনো বর্ধিতসভায় তাকে ডাকা হয় না কিংবা তার সঙ্গে কোনোরকম পরামর্শ করা হয় না বলে একুশে পত্রিকাকে জানান এমপি নদভী।
বনফুলে অনুষ্ঠিত বর্ধিতসভায় অংশ নেয়া সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে বর্ধিত সভার স্থানটিকে তিনি মিষ্টির দোকান বলতে নারাজ। তিনি বলেন, এটি মিষ্টির দোকান নয়, বনফুলের কনফারেন্স হল। বনফুলটা কী, এবং এলাকা ছাড়িয়ে সুদূর নগরে সভাপতির মিষ্টির দোকানের কনফারেন্স হলে বর্ধিত সভা করা কতটা যুক্তিযুক্ত বা সমর্থন করেন কিনা জানতে চাইলে কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আপনারা যাদের মিষ্টির দোকানদার বলছেন, সেই মিষ্টির দোকানির টাকায় সংগঠন চলে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বনফুল ও কিষোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবের দুটি সেলফোনে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবু তৈয়বের শরণাপন্ন হয়েও পাওয়া যায়নি এম এ মোতালেবের বক্তব্য।
প্রসঙ্গত, মিষ্টির দোকান থেকে শিল্পপতিতে পরিণত হওয়া এম এ মোতালেব বছর পাঁচ-ছয়েক আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে রাতারাতি সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে যান। দলের তৃণমূল, ত্যাগী নেতাদের ডিঙিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষপদ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টিকে সেসময় ভালোভাবে নিতে পারেননি অনেকেই।
তারা বলেছিলেন, ব্যবসায়ী, পুঁজিপতি, টাকার মালিকেরা যদি রাতারাতি আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলের শীর্ষপদে আসীন হন, তাহলে তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আসার আর কোনো দরকার নেই। রাজনীতিতে টাকার জোরে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’র সংস্কৃতি স্থায়ীভাবে রাজনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে, রাজনীতির আসল মানুষদের নিরুৎসাহিত ও নিষ্প্রাণ করবে বলে আক্ষেপ করা হয় সেসময়।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাড়াও বনফুল চেয়ারম্যান এম এম মোতালেব দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আগামী সংসদ নির্বাচনে সাতকানিয়া থেকে এমপি হওয়ারও স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
একুশে/এটি/এএ