ঢাকা: বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার। এর ফলে তারা সেখানে বসবাসের জমিজমা কেনাসহ বেশকিছু সুবিধা পাবেন। তাদের জীবনকে সহজ করার জন্যে এটি করা হচ্ছে বলে সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
খবরটি প্রকাশ করেছে বিবিসি অনলাইন।
এতে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদী ভিসায় ভারতে বসবাসরত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানরা এই সুযোগ পাবেন। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। এর ফলে তারা সম্পত্তি কিনতে পারবেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন, কর্মসংস্থান নিজেরা করতে পারেন, ভারতের জাতীয় পরিচয়পত্রের শামিল বিভিন্ন কার্ড যেগুলো সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য জরুরি সেগুলোর জন্য তারাও আবেদন করতে পারবেন।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রতিবেশি তিন দেশ থেকে সংখ্যালঘুরা ভারতের যেসব রাজ্যে তারা আছেন সেখানে অবাধে চলাচল করতে পারবেন। দীর্ঘমেয়াদী ভিসা না থাকলে সেজন্যও আবেদন করতে পারবেন। এই সুবিধা দেয়ার জন্য সাতটি রাজ্যকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এগুলো হলো ছত্তিশগড়, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান।
দেশ ভাগের পর থেকেই বাংলাদেশ ছেড়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভারতে চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তান আমলে তো বটেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও এই প্রবণতা থামেনি। জমি দখলসহ নির্যাতনের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা। বিশেষ করে নির্বাচন বা আন্দোলন বা সামাজিক-রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সময় এই প্রবণতা বেড়ে যায়। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় মন্দিরের পুরোহিত বা সেবায়েতের ওপর হামলা এবং বেশ কয়েকজনে হত্যার ঘটনায়ও বিশেষ করে হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ১৯৫১ সালে করা প্রথম আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর অনুপাত ছিল মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় এই জনগোষ্ঠীর একটি অংশ ভারতে পারি জমায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বেশ কয়েক লাখ হিন্দু ভারতে চলে যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৪ সালে করা আদমশুমারি অনুযায়ী দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১৪ শতাংশ ছিল হিন্দু। আর ২০১৫ সালে তা আরও কমে ১০ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়ায়।
তবে ভারত প্রতিবেশি দেশে সংখ্যালঘু নাগরিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা কেবল বাংলাদেশের জন্য দিচ্ছে না। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু ও শিখদের কথা ভেবেও এটি করা হয়েছে বলে ভারতের বিভিন্ন সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, বা মেঘালয় অর্থাৎ যেসব এলাকায় বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা গিয়ে সচরাচর থাকেন সেসব এলাকায় এসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে না। সুতরাং তারা এসব এলাকায় কতটা লাভবান হবেন সেটি প্রশ্নের বিষয়। কিন্তু দিল্লিসহ নির্দিষ্ট সাতটি রাজ্যে গিয়ে তারা এসব সুবিধা নিতে পারবেন।