জামালখানে আলো ছড়াচ্ছে ‘২০ বাঙালির ম্যুরাল’

আবু আজাদ : ‘সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে আজকের নতুন প্রজন্ম পশ্চিমা ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম খুঁজে প্লেটো, সক্রেটিসদের। তারা জানে না, আমাদের রয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসেনানী মাস্টারদা সূর্যসেন, অসাম্প্রদায়িকতার বার্তাবাহক ফকির লালন শাহ্ আর নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনে’র মত ইতিহাস পাল্টে দেয়া মনীষী।’

বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) বিকেলে নগরীর জামালখান সেন্ট মেরিস স্কুলের দেয়ালজুড়ে তৈরী ‘২০ বাঙালির ম্যুরাল’ প্রসঙ্গে একুশে পত্রিকাকে বলছিলেন জামাল খান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন।

তিনি আরো বলেন, ‘সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যে ভাবে আমাদের শিশুদের মনমগজ দখল করে নিচ্ছে, এভাবে চললে আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা করা যাবে না। তাই আমরা চেষ্টা করছি, বর্তমান প্রজন্মের কাছে বাংলাকে পরিচয় করিয়ে দিতে। সেই চেষ্টার একটি অংশ হিসেবে ‘২০ বাঙালির ম্যুরাল’। আমাদের শিক্ষার্থীরা ম্যুরালের অমিয় বাণী গুলো তাদের জীবনে ধারন করে আলোকিত হবে বলে আসা রাখি।’

শৈবাল দাস সুমন বলেন, ‘এই এলাকায় অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থীর পদচারণা মুখর থাকে জামালখান। ম্যুরালগুলো শিক্ষার্থীদের চোখে পড়লে তারা জানবে, এদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের। যাদের অবদানে বাঙালি জাতি আজ প্রতিষ্ঠিত।’

কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমনের কথার সূত্র ধরেই বলা যায়, সত্যিই আলো ছড়াচ্ছে ‘২০ বাঙালির ম্যুরাল’। শিক্ষার আলো আলো ছড়াচ্ছে জামালখানে।

এখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন না হলেও এসব গুণী ব্যক্তিদের ম্যুরাল দেখতে বৃহস্পতিবার বিকালে ভিড় করছে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থী, শিশু-কিশোরসহ সকল শ্রেণির দর্শনার্থী।

ম্যুরাল দেখতে আসা নগরীর নাসিরাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মীর সামিউল আলম রাজন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বাবা-মায়ের কাছ থেকে ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে জেনেছি। এই ম্যুরাল দেখে বিষয় গুলোকে জীবন্ত মনে হচ্ছে।’

ব্যাংক কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের কাছে এই ম্যুরাল জাতির শ্রেষ্ঠসন্তানদের অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরবে। ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও শিশু-কিশোরসহ সকল শ্রেণির মানুষ সড়কে চলাচলের পথে ওই ম্যুরাল গুলো দেখে তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন। এছাড়া নতুন প্রজন্মকে বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানাতে সাহায্য করবে এই ম্যুরাল।’

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ দেখবে জামাল খান শিরোনামে সৌন্দর্যবৃদ্ধির আওতার প্রকল্প এটি। প্রায় ১০ লাখ টাকা বাজেটের এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে ‘দৈনিক আজাদী’। দোয়েল ডেভেলপমেন্টের কর্ণধার অজয় পালের ডিজাইনে শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য্য ম্যুরালগুলোতে ফুটিয়ে তুলছেন বাঙালি ২০ জন মনীষীর প্রতিকৃতি।

এঁদের মধ্যে রয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, নারীজাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন,

অসাম্প্রদায়িকতার বার্তাবাহক ফকির লালন শাহ্, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসেনানী মাস্টারদা সূর্যসেন, বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন,

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, পল্লীকবি জসীম উদ্দীন, বেগম সুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রাহমান ও দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেকের প্রতিকৃতি।

আগামী ৭ মার্চ সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এ ম্যুরাল উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

একুশে/এএ