তুর্কি নারীর কক্ষে চুরি, মামলা নেয় না পুলিশ, আসামী ধরে পিবিআই (ভিডিওসহ)

চট্টগ্রাম : রোহিঙ্গাদের সাহায্যে আসা বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় পুলিশের পক্ষ থেকে নানা প্রস্তুতির কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি একটি ঘটনায় বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের চরম অবহেলার চিত্র ফুটে উঠেছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলার কলাতলির ‘হোটেল স্যুট সাদাফে’ অবস্থানরত দুই তুর্কি নারী চিকিৎসকের কক্ষে চুরির ঘটনা ঘটে। এসময় ওই কক্ষ থেকে ৩৩শ’ ইউএস ডলার, ১০০শ’ তার্কিশ মুদ্রা চুরি হয়। ঘটনার পরদিন (১৫ ফেব্রুয়ারি) ওই তুর্কি নারী চিকিৎসকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে হোটেলের সিটিভির ফুটেজ দেখে চুরির কাজে হোটেলবয় জাকির হোসেনকে শনাক্ত করা হয়। যেখানে দেখা যায় ৭ম তলার ৭০১ নম্বর রুমের পেছনের দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে অভিযুক্ত জাকির।

পরে ওই দিন বিকেলে হোটেল মালিকের পক্ষ থেকে কক্সবাজার থানায় মামলা করতে গেলে, তা নিতে অস্বীকৃতি জানায় কক্সবাজার থানার ওসি ফরিদুল আলম ভুঁইয়া। পরে থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল আজম একটি কাগজে অভিযোগ নিলেও, কাগজটি ছিলো স্মারকবিহীন। এসময় হোটেল মালিকের পক্ষ থেকে চুরির দায়ে অভিযুক্তের ছবি, সিসিটিভি ফুটেজ ও ঠিকানা সরবরাহ করা হয় পুলিশকে।

কিন্তু ঘটনার একসপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আসামিকে ধরতে, এমনকি আসামির অবস্থান শনাক্ত করতেও ব্যর্থ হয় কক্সবাজার থানা পুলিশ। এরমধ্যে মামলা না নিলেও অভিযোগ দাখিল ও আসামির মোবাইল ট্রেকিংয়ের জন্য অভিযোগকারিদের থেকে এএসআই দিল মোহাম্মদ কয়েক দফায় পাঁচ হাজার টাকা উৎকোচ নেন।

এভাবে কেটে যায় এক সপ্তাহ। চুরির শিকার তুর্কি নাগরিকদের পক্ষ থেকে চাপ বাড়তে থাকে। স্থানীয় পুলিশের অসহযোগিতা ও ঘটনার সঙ্গে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা জড়িত থাকায় হোটেল মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের এক সাংবাদিকের মাধ্যমে গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে জানায়।

পিবিআই’য়ে অভিযোগের চব্বিশ ঘণ্টার মাথায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদিঘী এলাকার পপুলার ফার্মেসির সামনে থেকে আসামীকে আটক করে। কিন্তু পরে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার পুলিশকে আসামী নিয়ে যেতে অনুরোধ করা হলে মামলা নেই অজুহাতে তারা আসামীকে চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়!

পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর অঞ্চলের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোবাইল ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে হোটেলবয় জাকির হোসেনকে (২৪) লালদিঘী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে চুরি করা ১২শ’ ইউএস ডলার, ১০০শ’ তার্কিশ মুদ্রা ও আড়াই হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে কক্সবাজার থানা পুলিশকে জানানো হলে, মামলা নেই এই অযুহাতে আসামীকে নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় তারা। পরে তাৎক্ষনিকভাবে বিকেলে মামলা দায়েরের পর রাতে আসামীকে কক্সবাজার থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়।

হোটেল স্যুট সাদাফের মালিক সাজ্জাদ করিম টিংকু একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য আসা ৪০ জন তুর্কি নাগরিক আমার হোটেলের ৭ম তলার ১০টি কক্ষ ভাড়া নেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে হোটেলবয় হিসেবে সদ্য কাজে যোগ দেওয়া জাকির ৭০১ নম্বর রুমের পেছনের দরজা ভেঙে চুরি করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরদিন ঘটনা জানতে পেরে কক্সবাজার থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে, তা নিতে অস্বীকৃতি জানায় কক্সবাজার থানা পুলিশ। এসময় ওসি রণজিৎ বড়ুয়া, এমন কাজের লোক কেন রেখেছেন উল্লেখ করে আমাদের বকাঝকা করেন। পরে মামলা না নিয়ে থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল আজম একটি কাগজে অভিযোগ লিখে নেন। যার জন্য দু’হাজার টাকাও নেন তিনি।’

‘পরে আমরা অভিযোগের তন্তের অগ্রগতি জানতে গেলে তারা জানান আসামীর মোবাইল ট্রেকিংয়ের চেষ্টা চলছে। এ জন্য টাকা লাগবে। পরে মোবাইল ট্রেকিংয়ের জন্য এএসআই দিল মোহাম্মদকে বিভিন্ন সময় কয়েক দফা টাকা দেই। সাথে চুরির দায়ে অভিযুক্তের ছবি, সিসিটিভি ফুটেজ ও ঠিকানা সরবরাহ করি। কিন্তু সপ্তাহ পরেও তারা এর কোনো কুলকিরানা করতে না পারায় আমরা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। বলেন সাজ্জাদ করিম টিংকু।

তিনি আরো বলেন, ‘মজার বিষয় হচ্ছে এক সপ্তাহে কক্সবাজার পুলিশ আসামীকে খুঁজে না পেলেও, মাত্র চব্বিশ ঘন্টার মাথায় পিবিআই চট্টগ্রাম থেকে আসামীকে আটক করে। পরে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার পুলিশকে আসামী নিয়ে যেতে অনুরোধ করা হলে মামলা নেই অজুহাতে আসামীকে চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়! অথচ তারাই মামলা নেননি একসময়। পরে তাৎক্ষনিকভাবে মামলা দায়েরের পর রাতে নিজের খরচে আসামীকে কক্সবাজার থানায় পাঠাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার থানার ওসি ফরিদুল আলম ভুঁইয়া একুশে পত্রিকাকে, ‘আমি জানি না কেন মামলা নেয়া হয় নাই, তবে গতকাল মামলা নেয়া হয়েছে।’ বলে মুঠোফোনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর বারবার চেষ্টা করেও মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি।’

একুশে/এএ