সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

ছিনতাইকারীর পরিচয় নিয়ে পুলিশের কাছে ঘুরছে ছিনতাইয়ের শিকার নারী! (ভিডিওসহ)

প্রকাশিতঃ ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | ১০:৩১ পূর্বাহ্ন

আবু আজাদ : জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব যে পুলিশের কাঁধে, ছিনতাইয়ের শিকার এক নারী ছিনতাইকারীর পরিচয় নিয়ে ঘুরছে সেই পুলিশের দুয়ারে দুয়ারে। ছিনতাইয়ের মামলা দিতে গেলে নিয়েছে অভিযোগ। ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি যথাযথ উদ্যোগ।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ছিনতাইয়ের শিকার ওই নারীর পক্ষ থেকে ছিনতাইকারীর ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত গাড়ীর নম্বর পুলিশকে সরবরাহ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। অপরদিকে তথ্য-উপাত্তসহ ছিনতাইয়ের মামলা দিতে গেলে তা না নিয়ে, ভিকটিমের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে শুধু অভিযোগ।

এ অভিযোগ উঠেছে নগরীর হালিশহর থানার ওসি মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে।পুলিশের বিরূপ আচরণে এলাকাবাসীর মঝে ছিনতাইয়ের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত এই সংস্থার সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, মিউচুয়্যাল সেভিংস কো-অপারেটিভ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহরম সুলতানা সিক্তা একজন নারী উদ্যোক্তা। নগরীর হালিশহর কে ব্লকের ৯ নম্বর রোডে তার অফিস। গত ২৮ জানুয়ারী দুপুরে তার অফিস থেকে বের হয়ে হাঁটা দূরত্বের বাসায় যাচ্ছিলেন। এসময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ছিনতাইকারীরা তার হাতব্যাগটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ছিনতাই হওয়া হাতব্যাগে একটি আইফোন (সিক্স-প্লাস)ও একটি স্যামসাং মোবাইলসহ বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিলো। এ কাজে সিএনজি চালকসহ পাঁচ ছিনতাইকারী পৃথকভাবে ব্যবহার করে একটি মোটরসাইকেল ও একটি সিএনজি অটোরিকশা। যে দৃশ্য স্থানীয় বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।

সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২৮ জানুয়ারী দুপুর ২টা ২৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় আসেন ছিনতাইয়ের শিকার মহররম সুলতানা সিক্তা। তার পিছু নিয়ে ২টা ২৯ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে আসে ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলটি। দশ সেকেন্ড না যেতেই দৃশ্যপটে হাজির ছিনতাইয়ে সহায়তাকারীদের একটি সিএনজি অটোরিকশা।

পরবর্তী ৩০ সেকেন্ডে ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি। পেছন পেছন অনুসরণ করে আসা মোটরসাইকেলটি কৌশলে সিক্তার বামপাশ দিয়ে এসে ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় তার হাতব্যাগটি। তখনো পেছনে রয়েছে ছিনতাইয়ে সহায়তাকারীদের সিএনজি অটোরিকশাটি।পরে ওখানেই গাড়ি ঘুরিয়ে সবার সামনে দিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এটি মূলত টার্গেট ছিনতাই। ভিকটিমকে দীর্ঘ সময় অনুসরণ করে ছিনতাইকারীরা তার পিছু নেয়। ছিনতাইয়ের সময় পেছনের মোটরসাইকেলে থাকা ছিনতাইকারীরা ভিকটিমের বামহাত থেকে যখন হাতব্যাগটি কেড়ে নেয়, ঠিক তখন পেছনে থাকা সিএনজি অটোরিকশাটি ঘটনা আড়াল করার জন্য উচ্চশব্দে হর্ণ বাঁজাতে থাকে। এ যেন বাস্তব ঘটনা নয়, সিনেমার শুটিং।
বিষয়টি এখানেই শেষ হতে পারতো। তবে পরের ঘটনা আরো বিস্ময়কর।যেখানে হেরে গেছে পর্দার সিনেমাও!

দিনে দুপুরে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েও দমে যাননি মহররম সুলতানা সিক্তা। নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করেছেন ছিনতাইয়ের সময়কার বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ, এমনকি নিজেই সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনাসহ নানাভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে ছিনতাইকারীর ছবি ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশার নম্বর (চট্টমেট্রো-থ : ১২-৩৮১০) শনাক্ত করেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও ওই ঘটনায় কোনো মামলা নেয়নি হালিশহর থানা পুলিশ। বরং থানায় গেলে নানান প্রতিশ্রুতি আর মুখভরা কথায় সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছেন ওসি মাহফুজুর রহমান।

ছিনতাইয়ের শিকার মহররম সুলতানা সিক্তা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার দিনই আমি হালিশহর থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করি। এসময় পুলিশ আমার কাছ থেকে মামলা না নিয়ে অভিযোগ করতে বলে। পরে আমি নিজ উদ্যোগে ছিনতাইয়ের সময়কার বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। এমনকি নিজেই সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনাসহ নানাভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে ছিনতাইকারীর ছবি ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত গাড়ীর নম্বর শনাক্ত করে পুলিশকে সরবরাহ করি। কিন্তু ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এ ঘটনার তদন্তে কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি। হালিশহর থানার ওসি কখনো বলেন কয়েকদিনের মধ্যে ধরে ফেলবো, পায়ে গুলি করবো। আবার কখনো বিভিন্ন খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হালিশহর থানার ওসি মাহফুজুর রহমান একুশে পত্রিকার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাই আপনি ভিকটিমকে পাঠান কালকেই মামলা নেব।’

ঘটনার পর মাস পেরিয়ে গেলেও ব্যবস্থা নিলেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি ঘটনাটি ছিনতাই নয় “চুরি” বলে দাবি করেন।তার ভাষায়, ‘ছিনতাই আর চুরির মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।’

এসময় এই প্রতিবেদককে ‘চুরি’ আর ‘ছিনতাই’ এর পার্থক্য বোঝার জন্য আইন পড়ার আহ্বানও জানান ওসি মাহফুজুর রহমান।
‘চুরি’ এবং ‘ছিনতাই’ পৃথক কিছু হতে পারে, কিন্তু অপরাধীদের ধরতে শাব্দিক ব্যবধান অন্যকোনো কোনো পার্থক্য তৈরি করে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে, ‘নিশ্চুপ ওসি’।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মো. ফারুক উল হক পুরো ঘটনা জানার পর একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনার বক্তব্যে এটিতো স্পষ্ট যে, এ ঘটনার তদন্তে চরম অবহেলা করেছেন ওসি। আসলে ভাই কি বলবো…, জনগণের কাছাকাছি থাকতে কতকিছুই তো করছে পুলিশ। কিন্তু এমন দু’একজন ওসির কারণে পুলিশের সুনাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

একুশে/এএ/এটি