:: স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ::
মানবিক কাজের জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ও শ্রদ্ধা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি জনগণের যে কোন প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম। নতুন নতুন গোলন্দাজ রেজিমেন্ট ও দূরপাল্লার কামান সংযোজন এবং কম্পিউটার বেইজড আধুনিক সরঞ্জামাদি গোলন্দাজ কোরের সক্ষমতাকে আরও সুসংহত করেছে।
মঙ্গলবার নগরীর হালিশহরে আর্টিলারি ক্যাম্পে রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির (গোলন্দাজ কোর) পঞ্চম পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি একথা বলেন। পরে তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, গোলন্দাজ কোরের সদস্যরা অপারেশন ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি খেলাধূলায়ও অত্যন্ত সক্রিয়। দেশের প্রয়োজনে সর্বদা এ বাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এর ফলে সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ, ভূমিহীন ও আশ্রয়হীনদের জন্য আবাসন নির্মাণের মাধ্যমে সেনাবাহিনী সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে মানবসেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। আশা করি সেনাবাহিনী ভবিষ্যতেও এ ধরনের মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুলের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রশিক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে সর্বোচ্চ মানের পেশাদারিত্ব অর্জনে প্রশিক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক সরঞ্জাম ও কৌশল সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে।
প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কঠোর শৃঙ্খলা অনুসরণ করতে হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি মাতৃভূমির কল্যাণে সেনাবাহিনী কাজ করে যাবে। গোলন্দাজ রেজিমেন্টের যেসব সদস্য মাতৃভূমি রক্ষায় প্রাণ দিয়েছেন তাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে বঙ্গভবন থেকে আর্টিলারি ক্যাম্পে পৌঁছেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির (গোলন্দাজ কোর) পঞ্চম পুর্নমিলনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে বক্তব্য রাখেন।
গত ৮ নভেম্বর থেকে তিনদিনব্যাপী হালিশহরে আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুলে আর্টিলারি কোরের সপ্তম কর্ণেল কমান্ড্যান্ট অভিষেক ও ৩৪ তম বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলন এবং পঞ্চম কোরের পুর্নমিলনী অনুষ্ঠিত হয়।
বৌদ্ধ মন্দিরে রাষ্ট্রপতি
এদিকে নগরীর নন্দনকাননে শতবর্ষ প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। মঙ্গলবার বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটে নগরীর নন্দনকাননে চট্টগ্রাম বৌদ্ধবিহারে প্রবেশ করেন তিনি। এসময় বিহারের অধ্যক্ষ ড.জ্ঞানশ্রী মহাথেরো রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান।
বিহারে প্রবেশের পর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হন। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনেরা রাষ্ট্রপতিকে কাশ্মিরী শাল আর বৌদ্ধমূর্তি উপহার দিয়ে বরণ করে নেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বৌদ্ধ সমিতির চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অজিত রঞ্জন বড়ুয়া এবং সহ সভাপতি ইউএসটিসির উপাচার্য ডা.প্রভাত রঞ্জন বড়ুয়াসহ সংগঠনের নেতারা । রাষ্ট্রপতি সেখানে একটি নাগেশ্বর বৃক্ষের চারা রোপণ করেন।
নব্বইয়ের দশকে দেশ গণতন্ত্রে উত্তরণের পর প্রথম কোন রাষ্ট্রপতি চট্টগ্রামে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রাচীনতম এই উপাসনালয়ে এলেন। এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নন্দনকানন বৌদ্ধমন্দিরে এসেছিলেন।
বৌদ্ধ বিহারে রাষ্ট্রপতির গায়ে কাশ্মিরী শাল জড়িয়ে দেন বিহারের অধ্যক্ষ। বৌদ্ধ সমিতির পক্ষ থেকে একটি মূর্তি ও ক্রেস্ট রাষ্ট্রপতিকে উপহারও দেয়া হয়। এরপর বৌদ্ধ সমিতির নেতাদের নিয়ে রাষ্ট্রপতি বিহার পরিদর্শন করেন।
বৌদ্ধবিহার পরিদর্শনের পর রাষ্ট্রপতিকে চট্টগ্রামের পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লুতে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ বুধবার রাষ্ট্রপতির চট্টগ্রাম ত্যাগ করার কথা। বুধবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে হেলিকপ্টারযোগে রাষ্ট্রপতি কক্সবাজার যাবেন বলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।