চট্টগ্রাম বার নির্বাচন : গুরুত্ব পাচ্ছে ক্লিন ব্যক্তি ইমেজ

চট্টগ্রাম: সমিতির নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এই বিরোধের নেতিবাচক প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সরকারসমর্থক আইনজীবীরা। এতে বিএনপি ও জামায়াতপন্থিরা সুবিধা পেতে পারে। এ ছাড়া প্রতিবার তিনটি প্যানেলে বিভক্ত হয়ে প্রার্থীরা মাঠে থাকলেও এবার রয়েছে চারটি প্যানেল। তবে এবারের নির্বাচনে ‘ক্লিন ব্যক্তি ইমেজ’ প্রাধান্য পাবে বলেছেন বেশ কয়েক ভোটার। সব মিলিয়ে আজ রোববার জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আশা করা হচ্ছে এই নির্বাচনে।

এবার নির্বাচনী যুদ্ধ আওয়ামী লীগের জন্য যতটা কঠিন, ততটাই সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের কাছে। গত বছর অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলই বলছে এই কথা। ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। নির্বাচনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নয়টি পদে জয়লাভ করে সমন্বয় পরিষদ। বাকি নয়টি পদে জয়ী হন ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরা। নির্বাচনে সভাপতি পদে সমন্বয় পরিষদের পক্ষে রতন কুমার রায় ১ হাজার ১৬৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ঐক্য পরিষদের এএসএম বদরুল আনোয়ার। তিনি পেয়েছিলেন ১ হাজার ৩৮ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে সমন্বয় পরিষদের মোহাম্মদ আবু হানিফ ১ হাজার ৩৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ঐক্য পরিষদের মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তার প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ৩৮১। মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে তিনি হেরে গিয়েছিলেন।

আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, এত দিন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী স্বতন্ত্র তিনটি প্যানেলের মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এবার ‘গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি’ নামে নতুন একটি প্যানেল থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি পদে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও সমমনা দল সমর্থিত ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ‘আইনজীবী ঐক্য পরিষদ’, দলনিরপেক্ষ পরিচয়ধারী বাম রাজনৈতিক ঘরানার আইনজীবীদের সংগঠন ‘সমমনা আইনজীবী সংসদ’ নির্বাচনে সভাপতি-সম্পাদকসহ নয়টি পদে প্রার্থী দিয়েছে। এর বাইরে সাধারণ সম্পাদক পদে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ শুরুতে মো. আবু হানিফকে মনোনয়ন দিলেও চেম্বার বরাদ্দ ইস্যুতে বিতর্কের জেরে নাটকীয়তা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের স্টিয়ারিং কমিটির নেতাদের একাংশ সভা করে আবু হানিফের মনোনয়ন বাতিল করে মো. আবুল হাশেমকে প্রার্থী ঘোষণা করে। অস্বস্তি ও বিরোধ নিরসনে কেন্দ্র থেকে আওয়ামীপন্থি শীর্ষ আইনজীবী নেতারা এসে সার্কিট হাউসে বৈঠক করে দু’জনের বাইরে সাধারণ সম্পাদক পদে উত্তম কুমার দত্তকে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থী ঘোষণা করলেও বিরোধ মেটেনি। প্রার্থিতা অক্ষুণœ রাখেন আবু হানিফ। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ‘আইনজীবী ঐক্য পরিষদ’ পূর্ণ প্যানেলে প্রার্থী দিলেও একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আবদুল মুকিত নামে এক আইনজীবীও সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে সাধারণ সম্পাদকসহ প্রতিটি পদে এবার প্রার্থী সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইনজীবী বলেন, নির্বাচনে আওয়ামীপন্থিদের বিভক্তিতে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি বিরোধীরা সুবিধা পাবে। সাধারণ সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগের ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। যেহেতু হানিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনে বিএনপিপন্থিদের ভোটে জয় লাভ করা অনেকটা সহজ হয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী রেজাউল করিম রনি বলেন, আইনজীবীদের সঠিক অভিভাবক প্রয়োজন। আমরা চাই অভিভাবক যেন দুর্নীতি-অনিয়মমুক্ত হন। সৎ মানুষ যেন নেতৃত্বে আসে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাজমুল আহসান খান বলেন, নির্বাচনে ১৯টি পদে মোট ৫৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবার ৩ হাজার ৭৪০ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে এক বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। রোববার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটদানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।