ছিনতাই রুখে দিল ছাত্রলীগ নেতা, লুকোচুরি খেলে পুলিশ

চট্টগ্রাম : নগরীর নাসিরাবাদ লডস ইন হোটেলের সামনে একটি ছিনতাই প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছে এক ছাত্রলীগ নেতা। এসময় ছিনতাইয়ের ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করে দুই ছিনতাইকারীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশ সোপর্দ করেছে ওই ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহকর্মীরা। ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তি এবং আহত দুই ছিনতাইকারীর পরিচয় জানা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে আগ্রাবাদ থেকে গণপরিবহনে নাসিরাবাদ হোটেল লর্ডস ইন-এর সামনে নেমে পায়ে হেঁটে হোটেলটির দিকে যাচ্ছিলেন অজ্ঞাত পরিচয়ের লোকটি। এসময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা চার ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে সঙ্গে বহন করা তিন লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পাশেই কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক, এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন।

বিষয়টি বুঝতে পেরে সহকর্মীদের নিয়ে ছিনতাইকারীদের পিছু নেন তিনি। কয়েকগজ দৌড়ে গিয়ে দুই ছিনতাইকারীকে টাকাভর্তি ব্যাগসহ ঝাপটে ধরে ফেলেন। এসময় বাকি দুইজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ছিনতাইকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে বেশকয়েকটি নোট। নোটগুলো কুড়িয়ে নিয়ে পুরো টাকাটাই ভিকটিমকে বুঝিয়ে দেন ইলিয়াস ও তার সহপাঠীরা।

এদিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা ধৃত দুই ছিনতাইকারীদের গণধোলাই দেয়। পরে গোয়েন্দা পুলিশ এসে ছিনতাইকারীদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

তবে নগর গোয়েন্দা পুলিশ, খুলশী থানা, পাঁচলাইশ থানা কিংবা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ি কারো কাছে এই ছিনতাইয়ের খবর ছিল না। এমনকি আহত দুই ছিনতাইকারী কোথায় সে খবরও কেউ জানে না।

যোগাযোগ করা হলে ডিবি পুলিশের ডিউটি অফিসার এসআই সাদেক একুশে পত্রিকাকে জানান, তাদের কাছে এ ধরনের কিছুর খবর নেই। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দিনও জানালেন তাদের কাছে এ ধরনের খবর নেই। একই কথা বললেন পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর ও চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম।

এরপর ডিবি (ডিসি-উত্তর) হাসান মো. শওকত আলীকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার বক্তব্য জানা যায়নি। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, আহতাবস্থায় উদ্ধার দুই ছিনতাইকারী গেল কোথায়? একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ডিবি-সিএমপি লেখা পোশাক পরে এক ব্যক্তি আহত এক ছিনতাইকারীকে সিএনজিচালিত টেক্সিতে উঠাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এ ধরনের কাজে ডিবি সিএনজি ব্যবহার করার কথা নয়। কারণ তাদের মাইক্রো, হাইচ কিংবা নোহার অভাব নেই।

এরপর একুশে পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা গেল, ডিবির পরিদর্শক হাবিবের টিমে কাজ করেন এসআই মাসুদ। ঘটনার সময় তিনি মোটরসাইকেল করে ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন; তখন ডিউটিতে ছিলেন না মাসুদ। স্থানীয়দের অনুরোধে তিনি আহত দুই ছিনতাইকারীকে উদ্ধার করে সিএনজি অটোরিকশাতে করে নিয়ে যান। একুশে পত্রিকার তৎপরতা শুরু হওয়ার পর রাত পৌনে ৯টার ডিবির একটি সূত্র জানায়, পলাতক আসামিদের ধরার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মাসুদ। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়েরেরও কথা রয়েছে।

এসব বিষয় জানার জন্য এসআই মাসুদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।

এদিকে সাহসের সঙ্গে ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিহত করে ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার করা প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, চোখের সামনে একটা অন্যায় হচ্ছে দেখে চুপ থাকতে পারিন। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তা প্রতিহত করেছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরাই পারে এধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে।-বলেন ইলিয়াস উদ্দিন।