আজাহাদুল ইসলাম আরফাত : মিয়ানমারে ফিরে যেতে ‘ভয়’ পাওয়া রোহিঙ্গারাদের নিয়ে এবার ‘ভয়ে’ আছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গারা দিন দিন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করা শুরু করছে বাংলাদেশিদের ওপর। রোহিঙ্গা শিবির এলাকা থেকে বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার, রোহিঙ্গাদের হাতে রোহিঙ্গা খুন, তাদের হামলায় আহত ব্যক্তির মৃত্যুসহ গত এক মাসে নানা ঘটনার জন্ম দিয়েছেন রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা এসব মানুষেরা।
তাসমিন অাক্তার নামের একজন কলেজ ছাত্রী বলেন, ‘নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রথম দেখে খুব বেশি মায়া হত। যতটুকু পারতাম সহযোগিতাও করতাম। এখন অামাদের অবস্থা এমন হয়ে পড়েছে যে নিজে চলতেও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
‘অাগে দুয়েকটা টিউশনি করে খুব ভালোভাবে চলতে পারতাম। রোহিঙ্গারা অাসার পর থেকে অার টিউশনি করতে ঘর থেকে বের হতে দেয় না বাবা-মা। অার অামারও তেমন বের হতে ইচ্ছা করে না। কারণ হাজার হাজার রোহিঙ্গার ভীড়ে এক অজানা ভয় কাজ করে প্রতিনিয়ত অামাদের মাঝে।’ যোগ করেন তাসমিন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উখিয়া-টেকনাফ এলাকার পরিবেশ আগে শান্ত থাকলেও এখন নেই। বর্তমানে ওই দুই উপজেলার বিভিন্নস্থানে স্থাপন করা হয়েছে শরণার্থী শিবির। প্রায় দেড় হাজার হেক্টর বনভুমিতে গড়ে উঠেছে শরণার্থী শিবির। যাতে শরনার্থী সংখ্যা প্রায় ১১লাখ। এখন ওই এলাকার স্কুলগুলোতেও অাগের মত শিক্ষা কার্যক্রম নাই বললেও চলে। প্রথমে দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল অস্থায়ী শিবির। এখন হয়েছে নিবন্ধন কেন্দ্র। সেখানকার অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এখন এনজিওতে চাকরি নিয়েছেন।
রোহিঙ্গার শরণার্থীদের চাপে নানামুখী বিপদের মুখোমুখি কক্সবাজার স্থানীয়রা। যার প্রভাব পড়েছে পরিবেশ ও দৈনন্দিন জীবনে। অনেকের চাষের জমিটুকুও চলে গেছে রোহিঙ্গা শিবিরের অাওতায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, অস্বাস্থ্যকর এই শরণার্থী ক্যাম্পগুলো রোগবালাইয়ের জন্মভূমিতে পরিণত হয়েছে। শুধু রোহিঙ্গারা নন, রোগে অাক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রাও। এরই মধ্যে স্থানীয়দের মধ্যে অর্ধশতাধিক ডিপথেরিয়া রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। শুধু রোগবালায় নয়, প্রতিনিয়ত হচ্ছে পরিবেশের ক্ষতি। এত সংখ্যক লোকের প্রতিদিন দরকার ৮০০ টন জ্বালানী, যা অাসে অাশপাশের বন থেকে। ফলে প্রতিদিন দুটি ফুটবল মাঠের সমান বন উজাড় হচ্ছে বলে অভিযোগ। যার ফলে হুমকিতে জীববৈচিত্র।
অন্যদিকে বন্য হাতি চলাচলের পথে গড়ে উঠেছে শরণার্থী শিবির। যার ফলে গেল কয়েক মাসে হাতির অাক্রমণে মারা গেছেন ৬জন। অাহত হয়েছেন অারও অনেকে। স্থানীয়দের দাবি, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও অনেক বেড়ে গেছে। যা স্থানীয়দের অন্যতম কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপদগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও এখনও এর রূপরেখা চূড়ান্ত হয়নি।
উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, তাজনিমার খোলায় রোহিঙ্গা নেতা খুনের সাথে জড়িত একজনকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। তার কাছ থেকে দুই রাউন্ড গুলি সহ আমেরিকার তৈরী একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের খাওয়ার ও থাকার মত সংকট রয়েছে তাদের কাছে কিভাবে আমেরিকার তৈরী অস্ত্র আসলো তা উদ্বেগের বিষয়।