ঢাকা: আগামীকাল বৃহস্পতিবার মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। দেশের নানা শ্রেণি-পেশার ব্যস্ত নাগরিকরা ঈদ উদযাপন করতে ছুটে গেছেন পরিবারের কাছে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করবেন ঈদের আনন্দ। রাজনীতিবিদরাও এর বাইরে নন।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা ইতিমধ্যে নিজেদের ঈদের শিডিউল চূড়ান্ত করেছেন। তাদের কেউ কেউ ঢাকায়, কেউ বা নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন। আবার যারা ঈদের দিন এলাকায় থাকতে পারবেন না, তারা ঈদের আগে-পরে এলাকার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
এবারের ঈদ ক্ষমতাসীন দলটির নেতাদের কাছে ভিন্ন একটা আমেজের হওয়ার কথা ছিল। কারণ দলের জাতীয় সম্মেলন হওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল ১০ ও ১১ জুলাই। কিন্তু ঈদের কারণে সম্মেলন পিছিয়ে যাওয়ায় তাদের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি মিলল।
ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গণভবনে ঈদ উদযাপন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের দিন সকালে গণভবনে রাজনৈতিক নেতা, কূটনীতিকসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঈদ উদযাপন করবেন লন্ডনে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের থেকে যাওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালাতে এত দিন লন্ডনে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন তিনি। কিন্তু গণভোট শেষ হলেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সেখানে ঈদ উদযাপন করবেন তিনি। তার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে বসবাস করেন লন্ডনে।
গতবছর ঈদুল ফিতরের আগে তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছিল। এরপর গত বছরের ১৫ জুলাই লন্ডনে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে তা বাতিল করে ঢাকাতেই ঈদ করেন সৈয়দ আশরাফ।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ঢাকায়, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তার নির্বাচনী এলাকা ভোলায়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজের নির্বাচনী এলাকা সিলেটে, সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দীন আহমেদ রাজু ঈদ করবেন নরসিংদীর রায়পুরায়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে ঢাকায় ঈদ করবেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সতীশ চন্দ্র রায়। আর কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী নিজের নির্বাচনী এলাকা শেরপুরে ঈদ করবেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঈদ করবেন তার নিজ নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কোথায় ঈদের নামাজ পড়বেন তা নিশ্চিত নয়, তবে ঈদের দিন নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে যাবেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রামে ঈদ করবেন।
আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঈদের দিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর গণভবনের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। ঢাকায় ঈদের দিন কাটিয়ে পরের দিন নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ যাবেন। ফরিদপুরে নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের সাথে ঈদ করবেন সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ।
এদিকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বারবরের মতো এবার ঈদুল ফিতর মুন্সীগঞ্জে উদযাপন করবেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমি সব সময় রমজানের ঈদ গ্রামের মানুষের সঙ্গে পালন করি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।”
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকায় ঈদ করবেন। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ঈদ করবেন তার নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুরে।
দলটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর নিজ নির্বাচনী এলাকা নীলফামারীতে ঈদের নামাজ পড়বেন। শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সিলেটে, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল কুমিল্লায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া চাদঁপুরে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল গাজীপুরে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ঢাকায় ঈদ কাটাবেন।
কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ঢাকায় ঈদ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি নিজেই। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রামে, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ মাদারীপুরে, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী ঈদের দিন ঢাকায় থাকবেন। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু মুন্সীগঞ্জে ঈদ করবেন।
এ ছাড়া দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ঢাকাতেই ঈদ করবেন, তবে ঈদের আগে নির্বাচনী এলাকা থেকে ঘুরে আসবেন তিনি।
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু বলেন, “গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে ঈদ করব। এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করে ঢাকায় ফিরব।”
সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে আহমদ হোসেন নেত্রকোনায়, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেটে, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম মাদারীপুরে, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জয়পুরহাটে, বি এম মোজাম্মেল ঢাকায় ঈদ উদযাপন করবেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঈদ ঢাকায় উদযাপন করলেও ঈদের আগে নিজ নির্বাচনী এলাকা দিনাজপুরে ঘুরে আসবেন। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর ঈদে বান্দরবনে থাকবেন বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন।
উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ঈদের সময় দেশের বাইরে থাকবেন। তিনি বলেন, “ঈদের সময় আমেরিকায় আমার ছেলের কাছে থাকব। সেখানে আমি বাংলাদেশীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করব। ”
উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস ঈদের দিন মুন্সিগঞ্জে থাকবেন। তিনি বলেন, “ঈদের দিন আমি আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করব।”
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ঢাকায়, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম জামালপুরে, বিদুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ঢাকায়, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রাজশাহীতে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক নাটোরে ঈদ করবেন।
জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, “আমি সব সময় ঈদ উদযাপন করি এলাকার জনগণের সঙ্গে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।”