বাসস: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দেশের বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে ৩৩ লাখ ৯ হাজার ৭৮৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৫ বছর বা এর চেয়ে বেশী সময় ধরে চলমান মামলার সংখ্যা ৮ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৬টি। যার মধ্যে উচ্চ আদালতেই চলছে ২ লাখ ৯২ হাজার ২৩ মামলা।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে মঙ্গলবারের বৈঠকের প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তুম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব তথ্য জানান। এ সময় তিনি মামলা জট কমাতে বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন।
আইনমন্ত্রী জানান, উচ্চ আদালতে বিচারাধানী ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৫ মামলার মধ্যে আপিল বিভাগে রয়েছে ১৬ হাজার ৫৬৫ মামলা এবং হাইকোর্ট বিভাগে রয়েছে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫০টি। আপিল বিভাগের মামলাগুলোর মধ্যে ১১ হাজার ৩০৭ দেওয়ানি মামলা এবং ফৌজদারি মামলা ৫ হাজার ২৫৮টি। হাইকোর্ট বিভাগের মামলাগুলোর মধ্যে ৯৩ হাজার ১৭৪ দেওয়ানি মামলা এবং ২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৫টি। এছাড়া হাইকোর্টে ৭৬ হাজার ৭৭০টি রীট ও ৯ হাজার ১৭১টি আদিম দেওয়ানি মামলা বিচারাধীন আছে। নিম্ন আদালতের মামলাগুলোর মধ্যে ১২ লাখ ৭৯ হাজার ১০৭ দেওয়ানি মামলা এবং ফৌজদারি মামলা ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৭টি।
আইনমন্ত্রী আরও জানান, ৫ বছর বা এর চেয়ে বেশী সময় ধরে চলমান মামলার মধ্যে আপিল বিভাগে রয়েছে ১৮৯টি। যার ১৪৭টি দেওয়ানি এবং ৪২টি ফৌজদারি মামলা। আর হাইকোর্টে রয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৮৩৪টি মামলা। অধস্তন আদালতে একই সময় ধরে চলমান ৬ লাখ ১ হাজার ২৬৩টি মামলার মধ্যে ৩ লাখ ২ হাজার ২২৩টি দেওয়ানি মামলা এবং ফৌজদারি মামলা ২ লাখ ৯৯ হাজার ৪০টি।
বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে :
সরকারি দলের রহিম উল্লাহ’র এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচারাধীন মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা মতে পুরাতন মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রত্যেক আদালত সাক্ষীর সমন জারি নিশ্চিতপূর্বক সাক্ষীগণকে হাজির করে দ্রুততম সাক্ষ্যগ্রহণ, পুরাতন মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটরের নেতৃত্বে মনিটরিং সেল গঠন, প্রতি জেলায় কেস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন, বিচারকের শূন্য পদ পূরণের কার্যক্রম গ্রহণ, অধিক সংখ্যক বিচারক নিয়োগসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বিচার কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার:
সরকার দলীয় সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সারা দেশের আদালতে মামলার জট কমিয়ে ‘বিচার কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ’ নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। পুরানো মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিস্পত্তির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে দেশের ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে সেগুলোর জন্য ২০৫টি সহায়ক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া আরো ৫টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, ৭টি সাইবার ট্রাইব্যুনাল, ৮টি মানি লন্ডারিং ট্রাইব্যুনাল, ৩টি শ্রম আদালত, ১১২টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ১৫৯টি যুগ্ম জেলা জজ পদ, ১৯টি পরিবেশ আদালত, ৬টি পরিবেশ আপিল আদালত এবং ২১৪টি সহকারি জজ আদালতক সৃজনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।