সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

রেলমন্ত্রী আনকালচারড, ডেপথলেস : সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর (অডিওসহ)

প্রকাশিতঃ ১৬ জানুয়ারী ২০১৮ | ৭:০১ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হককে ‌‌‌‌‌‌’আনকালচারড’, ‘ডেপথলেস’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আক্রমণ ও আত্মাহুতির ঐতিহাসিক স্থান ইউরোপিয়ান ক্লাব সংরক্ষণে রেলমন্ত্রীর অসহযোগিতা প্রসঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রী একুশে পত্রিকার কাছে এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব‌্যক্ত করেন।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের তীর্থঘর, ইতিহাসের উৎপত্তিস্থল খ্যাত প্রীতিলতার স্মৃতিঘেরা পাহাড়তলি ‘ইউরোপিয়ান ক্লাব দীর্ঘ ৮৬ বছরেও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যবিরোধী পাকিস্তান সরকার এটিকে চতুর্থশ্রেণীর কর্মচারীদের কার্যালয় বানিয়েছিল। পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ৪৬ বছর আগে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘ এই সময়েও বাংলাদেশ সরকার ঐতিহাসিক স্থানটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি। এখনো চলছে সেই পাকিস্তানি ভাবধারায় রেলের একসিয়েন, চতুর্থশ্রেণীর কর্মচারীদের কার্যালয় হিসেবে।

এ পরিস্থতিতে বুধবার সকালে ইউরোপিয়ান ক্লাব পরিদর্শনে আসছেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের রক্তভেজা, স্মৃতিঘেরা এই স্থানটি পরিদর্শনে এসে প্রণব মুখার্জিকে দেখতে হবে স্রেফ রেলওয়ের জরাজীর্ণ একটি অফিসকক্ষ।

কেন এমন হলো, সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবেই বা কী পদক্ষেপ নিলেন- জানতে চাইলে মঙ্গলবার দুপুরে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর একুশে পত্রিকাকে বলেন, এটা নিয়ে রেলের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছি না। রেলমন্ত্রীকে একশ’ বার চিঠি দিয়েছি। অনেকবার মিটিংও করা হয়েছে। এটা যদি আমাদের কাছে হস্তান্তর না করে আমরা কীভাবে কাজ করবো। এটাই একটা সমস্যায় পড়ে গেছি। মনে হয় যেন একটা মন্ত্রণালয়ের সাথে আরেকটা মন্ত্রণালয়ের শত্রুতা। আসলে এটা ভালো কাজের জন্য চাইছি। এটা যাতে আমরা সংরক্ষণ করতে পারি ওভাবে। এখন পর্যন্ত পাই নাই। আমরা শেষপর্যন্ত পটিয়াতে একটা কাজ করলাম। ৪ কোটি ব্যয়ে প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক ভবন করেছি।

আমরা তো এধরনের কাজগুলো করতে চাই। একটা সরকারে থেকে আরেকটা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ করা তো ঠিক না। কিন্তু মুশকিল হয়ে পড়েছে। এরপরও আমি চেষ্টা করছি ওটা পাওয়ার জন্য। যেমন আমরা শচীন দেব বর্মণের বাড়িটা উদ্ধার করলাম। সুচিত্রা সেনের বাড়ি উদ্ধার করলাম। যেগুলো বেসরকারি লোকজন দখল করেছিল সেগুলো তো আমরা উদ্ধার করে ফেললাম। সরকারেরগুলো উদ্ধার করতে পারছি না- হেসে বলেন আসাদুজ্জামান নূর।

সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, আমিও খুব বিরক্ত। লোকটার (রেলমন্ত্রী) কোনো ডেপথ নেই। আকালচারড হলে যা হয় আর কী! একটু কালচারাল মাইন্ড না থাকলে এগুলো তো হয় না আসলে!

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন এ ব্যাপারে তাঁকে চিঠি প্রেরণ করেছেন জানিয়ে এ ব্যাপারে নিজের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করেন।

এদিকে বারবার বলার পরও রেলমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রাক্তন গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন।

সোমবার রাতে একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, প্রীতিলতার এই অসামান্য আত্মত্যাগ এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের গর্বিত এই স্থান থেকে রেলওয়ের অফিসকক্ষ সরিয়ে নিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য ২০১৪ সালে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হককে একটি ডিও লেটার (চাহিদাপত্র) দিয়েছিলাম। এরপর একাধিকবার মৌখিকভাবেও তাঁকে বলেছি। কিন্তু তিনবছরেও রেলমন্ত্রী এব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেননি।’

২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর পটিয়ায় প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক ভবন উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিষয়টি দেখে আমি আশাবাদী হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তার নজরে আনলে এবার কিছু একটা হবে। তাই নভেম্বরের শুরুর দিকে সংস্কৃতিমন্ত্রীকেও এ ব্যাপারে ডিও লেটার প্রেরণ করি। অদ্যাবধি তার কাছ থেকেও কোনো সাড়া মেলেনি। বলেন ডা. আফছারুল আমীন।

২০১৩ সালে দিকে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রীতিলতার আবক্ষমূর্তি স্থাপনের স্থান নিয়ে সমালোচনা করেন ডা. আফছারুল আমীন। তিনি বলেন, মনজুর আলম মেয়র থাকাকালে প্রীতিলতার আবক্ষমূর্তিটি যথাযথ স্থানে স্থাপিত হয়নি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর, শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানু ছিলেন এই আবক্ষমূর্তি স্থাপনের প্রথম প্রস্তাবকারী।

ইউরোপিয়ান ক্লাব থেকে দূরে কেন প্রীতিলতার আবক্ষমূর্তি? জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট রানু বলেন, শিক্ষার চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় কালচারাল একাডেমি করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় ইউরোপিয়ান ক্লাব, যেখানে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার আত্মাহুতি দিয়েছিলেন সেখানেই আবক্ষমূর্তিটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে যারা এটি বাস্তবায়ন করেছে তারা যথাস্থানে না করে ইউরোপিয়ান ক্লাবের দূরবর্তী স্থানে স্থাপন করেন।