মিশনে যেতে ‘তদবির’ চলে পুলিশে, সুযোগ পেয়ে যেতে চান না ওসি জসিম!

একুশে প্রতিবেদক : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যেতে নানা ‘চেষ্টা-তদবির’ আর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পুলিশ সদস্যরা যেখানে মরিয়া সেখানে কেবল ব্যতিক্রম তিনি। প্রত্যাশিত সুযোগ পেয়েও মিশনে যেতে তার অনীহা! শারিরীক অসুস্থতার ‘অজুহাত’ দেখিয়ে মিশন থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের জন্য পুলিশ প্রধানের কাছে তিনি আবেদন করেছেন। তবে সিএমপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরাধপ্রবণ থানা কোতোয়ালীর ওসি’র দায়িত্ব দিব্যি পালন করছেন জসীম উদ্দীন।

হাইতিতে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বপালনের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছিলেন ওসি জসীম। মিশনে যাওয়ার আগে টাঙ্গাইলে তিন মাসের প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার কথা ছিল তার। ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর ওই প্রশিক্ষণ শুরুর কথাও ছিল। তবে সেখানে প্রশিক্ষণ সংক্ষিপ্ত করার জন্য পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হকের কাছে আবেদন করেন ওসি জসীম উদ্দীন।

গত ১ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত ওই আবেদনে কোতোয়ালী থানার ওসি জসীম উদ্দীন উল্লেখ করেছেন, চট্টগ্রাম নগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ থানা কোতোয়ালী। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আদালত ভবন ও কেন্দ্রীয় কারাগারসহ বেশকিছু রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে কোতোয়ালী থানা এলাকায়। ডিসেম্বর মাসে বিজয় দিবস উপলক্ষে অত্র থানা এলাকায় বিজয় মেলা, বাণিজ্য মেলা ও নানা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান পালনসহ প্রতিদিনই রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সার্বক্ষণিক নজরদারীসহ ডিউটিতে থাকতে হয় বিধায় তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের শুধুমাত্র শেষ অংশে অংশগ্রহণ করার আদেশদানে ব্যবস্থা করতে মর্জি হয়।

প্রশিক্ষণ সংক্ষিপ্ত করার এই আবেদনের পর গত ১২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত আরও একটি আবেদন পুলিশ প্রধানের কাছে পাঠান ওসি জসীম উদ্দীন। এবার সরাসরি মিশন থেকেই অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করে বসেন তিনি।

এতে জসীম উদ্দীন লিখেন, হাইতি মিশনে আমি প্রাথমিকভাবে মনোনীত হওয়ায় ১ জানুয়ারী থেকে পিটিসি টাঙ্গাইলে অনুষ্ঠিতব্য তিন মাসের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় আমাকে নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে হয় এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। এ অবস্থায় আমার পক্ষে শারীরিকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা সম্ভব নয় বিধায় শান্তিরক্ষা মিশনের চূড়ান্ত তালিকা হতে আমাকে অব্যাহতি দানের প্রার্থনা করলাম।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য বাংলাদেশ থেকে যোগ্যপ্রার্থীদের নির্বাচন করেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। এজন্য স্যাট (সিলেকশন এসিসট্যন্স টিম) পরীক্ষা নেয়। এই পরীক্ষায় পুলিশ সদস্যদের ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা এবং গাড়ি ও অস্ত্র চালনার বিষয়ে পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে হয়। এর বাইরে কারও কারও ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক তদবিরের’ দরকারও হয় মিশনে যেতে। এতকিছুর পরও বিশেষ বেতন-ভাতার কারণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যেতে চান পুলিশ সদস্যরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সাধারণত থানার ওসি ও অপরাধ বিভাগে ভালো পদে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা জাতিসংঘ মিশনে যেতে চান না। এছাড়া ফর্মড পুলিশ ইউনিট বা এফপিইউ মিশনে অনেকেই যেতে চান না, কারণ সেখানে টাকা কম। এখন ওসি জসিম স্বপ্রণোদিত হয়ে এফপিইউ মিশনে যেতে চেয়েছিল। চট্টগ্রামের কোতোয়ালীর মতো একটি বড় থানার ওসির এফপিইউ মিশনে যাওয়ার দরকার কেন হয়েছিল- জানি না। আবার অসুস্থতার অজুহাতে মিশন থেকে অব্যাহতিই কেন চাচ্ছে- বুঝা মুশকিল। তিনি যে আবেদনটি সর্বশেষ পাঠিয়েছেন সেটির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’

২০১৪ সালের এপ্রিলে ইয়াবা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নামে কক্সবাজারের প্রশাসন। সে সময় কক্সবাজার সদর থানার ওসি জসীম উদ্দীনসহ মোট পাঁচ ওসি ও ১১২ পুলিশ সদস্যকে একযোগে বদলি করা হয়। এরপর কুমিল্লায় প্রায় এক বছর কর্মরত থাকার পর ২০১৫ সালের মার্চে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ওসির দায়িত্ব পান জসীম উদ্দীন। প্রায় তিন বছর ধরে কোতোয়ালীর ওসির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ওসি জসীম উদ্দীন বলেন, ‘এটা তো আমাদের ডিপার্টমেন্টের বিষয়… আমার কিছু সমস্যা থাকতে পারে মিশনে না যাওয়ার জন্য। শারীরিক অসুস্থতা আছে।’