ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর এবার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্য চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কালবিলম্ব না করে সরকারকে ঐক্য-প্রক্রিয়া শুরুর তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
আজ রবিবার বিকালে গুলশানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এই আহ্বান জানান। এর আগে তিনি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে সংবাদ সম্মেলন হলেও বরাবরের মতোই সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি খালেদা জিয়া।
গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ রুখতে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যের আহ্বান জানান। আজ রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেত্রীও ঐক্য চাইলেন। জাতীয় এই সংকটের মুহূর্তে অন্যান্য দলের পক্ষ থেকেও ঐক্যের আহ্বান এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কে ক্ষমতায় থাকবে আর কে ক্ষমতায় যাবে সেটা আজ বড় কথা নয়। আজ আমরা যারা আছি, আগামীতে তারা হয়তো কেউ থাকবো না। দেশ থাকবে, জাতি থাকবে। সেই দেশ ও জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আজ বিপন্ন। তাই এখন দরকার সবার ঐক্য।
গুলশানের রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসীদের হামলা প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রহীন দেশে স্বৈরাচারী শাসন, অসহিষ্ণু রাজনীতি, দমন-পীড়নের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অধিকারহীন সমাজ, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি ক্রমাগত চলতে থাকলে সেখানে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। শুক্রবার রাতের ঘটনায় শুধু একটি রেস্তোরাঁ নয়, সারা বাংলাদেশ স্তম্ভিত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা। তাই সবার মিলিত প্রয়াসে আমাদের এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রথম কর্তব্য হচ্ছে দেশের সরকার ও জনগণের। বর্তমানে সন্ত্রাসের যে চিত্র দেখছি সেটা নিছক আইন-শৃঙ্খলা জনিত মামুলি কোনো সমস্যা নয়। কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান দিয়ে এই সন্ত্রাস মোকাবেলা করা যাবে না। এই সংকটের শেকড় আরও অনেক গভীরে। সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে এই সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। এই বিষয়টির দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গুলশান হামলার নিন্দা জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ এ ধরনের কাপুরুষোচিত হামলা ও নিরপরাধ মানুষের হত্যাযজ্ঞকে মেনে নিতে পারে না। এমন অযৌক্তিক, নিষ্ঠুর, হঠকারী ও ভুল পথে কোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। কোনো আদর্শ কিংবা ধর্মই এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অনুমোদন করে না। শান্তির ধর্ম পবিত্র ইসলাম নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা এবং সন্ত্রাসের ঘোর বিরোধী।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।