চট্টগ্রাম: আহমদ হোসেন ডিলার নামে তালিকাভুক্ত এক রাজাকারের নাম যুক্ত করে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পৌর সদরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে।
‘বোয়ালখালী আহমদ হোসেন চৌধুরী আনোয়ারা বেগম চৌধুরী কলেজিয়েট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’ নামের ওই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্টা করা হয় ২০০৪ সালে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে। সে সময় রাজাকার আহমদ হোসেন ডিলারের বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন ডিলার তৎকালীন বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।
২০১৬ সালে মারা যাওয়া আহমদ হোসেন ডিলার মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিলেন বলে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি। তিনি বোয়ালখালী থানা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সাংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কমান্ডের ‘মুক্তি’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থে বোয়ালখালী অংশের রাজাকার তালিকায় মৃত আহমদ হোসেন ডিলারের নাম ২৫ নম্বরে রয়েছে।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব স্থাপনা থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম মুছে ফেলতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একই সাথে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য শিক্ষা ও স্থানীয় সরকার সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ৩১ জানুয়ারি সকল স্থাপনা, সড়ক ও রাস্তাঘাট থেকে তাদের নাম মুছে ফেলতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে নির্দেশনা আসে।
সরেজমিন দেখা যায়, বোয়ালখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়ের ১০০ গজ দূরে বোয়ালখালী আহমদ হোসেন চৌধুরী আনোয়ারা বেগম চৌধুরী কলেজিয়েট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৪ সালে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতার জোরে নতুন কোন স্থাপনা তৈরী না করেই বোয়ালখালী সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের একটি ভবনে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত করেন রাজাকারপুত্র আনোয়ার হোসেন ডিলার। এছাড়াও বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে বোয়ালখালী সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের জমিদাতা হিসেবে তার বাবা আহমদ হোসেন ডিলারের নামে নামফলক দিতে বাধ্য করেন কলেজ পরিচালনা কমিটিকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বোয়ালখালী আহমদ হোসেন চৌধুরী আনোয়ারা বেগম চৌধুরী কলেজিয়েট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা প্রায় একশ’। ওই স্কুলের সামনেই রয়েছে গোমদন্ডী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে ছাত্র-ছাত্রী আছে প্রায় আড়াই হাজার। ওই এলাকায় ছাত্রীদের জন্য পৃথক আরেকটি স্কুলের চাহিদা কখনোই ছিল না। তবুও নাম ব্যবহারের বাসনা থেকেই ১০ জনের মতো ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই স্কুলটি। স্কুলের লম্বা নাম দেখে বুঝা যায়, শিক্ষার আলো ছড়ানোর পরিবর্তে নামের প্রচারের দিকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠাতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘শুধু স্কুল নয়, রাজাকার আহমদ হোসেন ডিলারের নামে একটি বাড়িও রয়েছে। বোয়ালখালী পৌর সদরের মুজাহিদ চৌধুরী পাড়ায় স্থাপন করা ওই বাড়িটি আহমদ হোসেন ডিলারের বাড়ী হিসেবে পরিচিত। স্বাধীন দেশের স্থাপনায় স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম থাকাটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।;
এ বিষয়ে বোয়ালখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. হারুন মিয়া বলেন, ‘স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলেন আহমদ হোসেন ডিলার- এটা সঠিক। তার নামে স্কুল হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে কেউ কিছু বলছে না। আপনি প্রশাসনের বক্তব্য নিতে পারেন এ ব্যাপারে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফিয়া আখতারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, তবে প্রতিবারই নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এছাড়া মৃত রাজাকার আহমদ হোসেন ডিলারের বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন ডিলারের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এইমাত্র জানলাম বিষয়টা। আগে জানলে তো এতদিনে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। রাজাকারের নামে কোন স্কুল, স্থাপনা থাকতে পারে না। এই ব্যাপারে আমি খোঁজ নেব।’