আরিফুজ্জামান আরিফ, বেনাপোল : উদ্বোধন করা হলো যশোরে দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক- ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক-এর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার দুপুর ১টায় ঢাকায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পার্কটি উদ্বোধন করেন।
যশোর শহরের নাজিরশঙ্করপুর এলাকায় নিজস্ব জায়গায় এই পার্কটি তৈরি করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকা।
গণভবন থেকে সুইচ টিপে পার্ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছিলেন। অন্যপ্রান্ত যশোরে সফটওয়্যার পার্কে উপস্থিত ছিলেন যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়, যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম, প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) জাহাঙ্গীর আলম, যশোর জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহউদ্দিন শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পার্ক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুইজন শিক্ষার্থী, একজন শিক্ষক, দুইজন আইটি প্রফেশনাল এবং হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে যুদ্ধাপরাধের রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। তারা কোনো উন্নয়ন করেনি। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে। সে কারণে তাদের প্রযুক্তির কোনো দরকার ছিল না। তাই বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ তথ্যপাচারের কথিত আশঙ্কায় ছেড়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) ছিল ক্ষমতা ভোগ করার মানসে। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষা তাদের ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক উদ্বোধনের মাধ্যমে মেধাভিত্তিক অর্থনীতির দ্বার উন্মোচন হলো। দেশে আরো এমন পার্ক তৈরি করা হবে। এসব পার্কে আইসিটি পণ্য উৎপাদিত হবে; যা রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে দেশ। বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।’
শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) জাহাঙ্গীর আলম জানান, সফটওয়্যার তৈরি, কল সেন্টার সেবা, ফ্রিল্যান্সিং, গবেষণা ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজ হবে এই পার্কে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর তরুণদের টার্গেট করে এই পার্ক তৈরি করা হয়েছে। এই অঞ্চলের তরুণরা সফটওয়্যারভিত্তিক কাজ করে নিজেরা স্বাবলম্বী হবে, দেশকে এগিয়ে নেবে। এখানে প্রায় পাঁচ হাজার তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে সরকার আশা করছে।
প্রকল্পের সার্ভে প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই জেলায় বিশ্বমানের একটি তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার চার বছরের মাথায় ২০১৪ সালের এপ্রিলে নাজির শঙ্করপুর এলাকায় দুই লাখ ৩২ হাজার বর্গফুট জমির ওপর ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ নির্মাণকাজ শুরু হয়।
এ সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ১৫ তলার মূল ভবনের পাশাপাশি তিন তারকা মানের একটি ১২ তলা ডরমেটরি ভবন রয়েছে।
জাপানি উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ডরমেটরি ভবনের ১১তলায় আন্তর্জাতিক মানের একটি জিম তৈরি করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে রয়েছে আধুনিক কনভেনশন সেন্টার ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে করা হয়েছে ৩৩ কেভিএ পাওয়ার সাব-স্টেশন।
ইতিমধ্যে জাপানের দুটি কোম্পানিসহ ৫৫টি কোম্পানিকে পার্কে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্টার্টআপ কোম্পানি হিসেবে তরুণদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে পুরো একটি ফ্লোর।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রফতানি আয় ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য পূরণে এই পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সরকার আশা করছে।