বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ আসলেই কী সেটা গত বছর মার্চেই প্রমাণ করে দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। নিজ হাতে ক’জন ব্যক্তির পা ধুয়ে দিয়েছেন। তাদের তিনজন ছিলেন মুসলিম, একজন হিন্দু শরণার্থী। পা শুধু ধুয়েই দেননি, তাতে চুমুও খেয়েছেন!
সে সময় ব্রাসেলসে সন্ত্রাসী হামলার পর জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হচ্ছিল মুসলমানরা। কিন্তু সন্ত্রাসীদের যে কোনো ধর্ম নেই, বরং সব ধর্মের মোদ্দা কথা হলো শান্তি, ভ্রাতৃত্ব; এই বার্তা দিতেই এটা করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস।
খ্রিষ্টধর্মের সবচেয়ে বড় নেতা, নিজ হাতে সাধারণত কয়েকজন মানুষের পা ধুয়ে দিলে সেটাই বড় খবর হতো। পায়ে পোপের চুমু এঁকে দেওয়া তো আরও অবিশ্বাস্য!
অবশ্য পোপ হওয়ার অনেক আগে একই কাজ করেছিলেন। ২০০১ সালে আর্জেন্টিনার ১২ জন এইডস রোগীর পা ধুয়ে তাতে চুমু দিয়েছিলেন ফ্রান্সিস। যাতে এইডস রোগীদের কেউ ঘৃণার চোখে না দেখে।
এভাবে বিশ্বভ্রাতৃত্বের অনেক ‘প্রথম’-এর স্বাদ উপহার দেয়া বিশ্বের ১৩০ কোটি মানুষের ধর্মীয় গুরু ও ভেটিক্যান প্রধান পোপ ফ্রান্সিস তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এখন বাংলাদেশে। শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার তিনি বাংলাদেশ আসেন। এসেই বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
পোপ বলেন, ‘কঠিন এই সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। শুধু রাজনৈতিক বিষয়ে সমাধানই নয়, বাংলাদেশে দ্রুত মানবিক সহায়তাও দিতে হবে।’
বাংলাদেশে আসার আগে মিয়ানমার সফর করেন পোপ। সাক্ষাৎ করেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অংসান সুচির সাথে। সেখানে ‘রোহিঙ্গা’ প্রসঙ্গ না তোলায় সমালোচিতও হয়েছেন তিনি।
বিষয়টা এভাবেও দেখা যায়, নেয়া যায়। ৭৮ বছর বয়সে পোপ নিজেই ছুটে গেছেন মিয়ানমার। তার এই ছুটে যাওয়াই কিন্তু অনেক বড় বার্তা। তাঁর শারীরিক উপস্থিতি মুখের উচ্চারণ কিংবা কথার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, তাৎপর্যপূর্ণ। এখান থেকে যে শিক্ষা নেবার নেবে, যে শোধরে নেবার নেবে।
অতল শ্রদ্ধা- বিশ্বভ্রাতৃত্বের সাম্প্রতিক ‘সেনসেশন’ পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি।