চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পী খুনের ঘটনায় তার সাবেক স্ত্রী রাশেদা বেগমের হাত আছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ; এরইমধ্যে রাশেদাকে ধরতে কাজ শুরু করেছে পুলিশের একাধিক দল।
চকবাজার থানার ওসি নুরুল হুদা একুশে পত্রিকাকে বলেন, গত বুধবার বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন এক নারী। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই বাসায় আসেন আইনজীবী। শনিবার সকালে ঘরের দরজা খোলা দেখে বাড়ির মালিকের সন্দেহ হয়। ভিতরে গিয়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন। শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা থেকে শনিবার ভোরের মধ্যে কোনো এক সময় ওমর ফারুক খুন হতে পারেন। এখন ওই নারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা রাশেদা বেগম ও তার স্বামী ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের এই ঘটনায় বাকলিয়া থানায় মাদকের মামলা হয়। ওই মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ওই নারীর সঙ্গে বাপ্পীর পরিচয়। এক সময় ওই নারীকে জামিনে বের করে আনেন বাপ্পী। কিন্তু তার স্বামী তখন জামিন পাননি। সে সময় ওই নারীর সঙ্গে বাপ্পীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়।
একপর্যায়ে কালা মিয়া বাজার, চকবাজার ডিসি রোডসহ একাধিক বাসায় একত্রে বসবাস করেন। এরইমধ্যে তারা বিয়েও করেন। চলতি বছরের শুরুতে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তখন বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেলে দুজনই পাল্টাপাল্টি মামলা করেন। রাশেদা মারধরের অভিযোগ এনে গত ১৭ জানুয়ারি আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীর বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাপ্পীকে গ্রেফতার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পরে আদালত থেকে জামিন পান তিনি। বাপ্পীর করা মামলায় রাশেদা ১৭ দিন জেল খাটেন।
এরপর হঠাৎ করে আইনজীবী বাপ্পীকে ভণ্ড, প্রতারক, নারীলোভী উল্লেখ করে নগরীর বাকলিয়া, ডিসি রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় একটি পোস্টার চোখে পড়ে। পোস্টারে উল্লেখ করা হয়, বিনা পয়সায় যুবতী নারীদের মামলা পরিচালনার অভিনয় করে আইনজীবী বাপ্পী কখনো প্রেম, কখনো বিয়ের নামে নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়ার পর ডিভোর্সের নথি গোপন করে সেই স্ত্রীর সাথে আরো ৬-৭ মাস রাতযাপন করেছে বলে সেই পোস্টারে উল্লেখ করা হয়।
পোস্টারে স্ত্রী রাশেদা বেগম ও বাপ্পীর বিয়ের ছবি ছাড়াও গ্রেফতারের পর রশি দিয়ে বাপ্পীর কোমরবাঁধা ছবিসহ দুটি ছবি দেয়া হয়। তখন কারো বুঝতে বাকি ছিল না যে, রাশেদাই এই পোস্টারের মুদ্রণকারী।
সূত্র মতে, এসবের পরও রাশেদার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলেন বাপ্পী। রাশেদার জন্য প্রতি মাসে কিছু খরচেরও ব্যবস্থা করতেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, রাশেদা বেগমই বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বড় মিয়া মসজিদের বাসাটি ভাড়া নেন, পরদিন সেই বাসায় গিয়ে খুনের শিকার হন বাপ্পী।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, একাধিক ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত রাশেদা বেগমই পরিকল্পিতভাবে ভাড়াটে খুনীর সাহায্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।
নিহত আইনজীবী ওমর ফারুক ওরফে বাপ্পীর (৩৩) গ্রামের বাড়ি বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার চৌমুহনী এলাকায়। তার বাবা আলী আহমেদ। মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন ফারুক। ওমর ফারুক বাপ্পী নগরের কুয়াইশ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। পরে চট্টগ্রাম ল’ কলেজ থেকে আইন পাশ করে ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম আদালতে আইন পেশায় যুক্ত হন।
আইন পেশার পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ওমর ফারুক বাপ্পী। তিনি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ সভাপতি, বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ছিলেন।
এদিকে আইনজীবী ওমর ফারুক ওরফে বাপ্পীর সহকারি আসাদ খানকে শনিবার দুপুরে পিবিআই কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এই ঘটনাটি আমরাও তদন্ত করে দেখছি। আসামি গ্রেফতারের পর সবকিছু স্পষ্ট হবে।’
রাশেদা গ্রামের ঠিকানা চকরিয়া লিখলেও অনেকে তাকে রোহিঙ্গা বলে সন্দেহ করে। আদালত পাড়ায় ইয়াবা নারী হিসেবে পরিচিত।