সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

ছোটভাইয়ের প্রেমের বিয়ে, খেসারত দিচ্ছে বড়ভাই-বন্ধু

প্রকাশিতঃ ২১ নভেম্বর ২০১৭ | ১১:২৬ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : প্রেম করে বিয়ে করেছেন ছোটভাই। আর থানা হাজতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বড়ভাই নুরুল আমিন এবং বরের বন্ধু বদিউল আলম।

সোমবার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বোয়ালখালীর পশ্চিম কধুরখীল চৌধুরীহাট থেকে এই দুজনকে আটক করে দুইদিন ধরে সিএমপির কোতোয়ালী থানা হাজতে আটকে রেখে তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নুরুল আমিনের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, একটি মিথ্যা অভিযোগে আমিনকে আটক করে মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত থানা হাজতে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে এসআই সজল বড়ুয়া। পরিবারের সদস্যদের কাছে দফায় দফায় ফোন করিয়ে নুরুল আমিনকে নির্যাতন ও কান্নার শব্দ শোনানো হচ্ছে। ফলে নুরুল আমিনের স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

এদিকে নুরুল আমিনের ছোটভাই (তারেকুল ইসলাম) প্রেম করে যাকে বিয়ে করেছেন সেই সাদিয়া হোসাইন আনিকাও (১৯) একই অভিযোগ তুলেছেন। সোমবার মধ্যরাতে ফেসবুকে দেয়া এক ভিডিওবার্তায় তিনি অভিযোগ করেন, তার স্বামীর বড়ভাই নুরুল আমিনকে অন্যায়ভাবে থানায় ধরে নিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে পুলিশ। তিনি বলেন, তারেককে তিনি ভালবেসে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন। তারা বেশ সুখে আছেন। এ নিয়ে তার বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনরা অহেতুক বাড়াবাড়ি করে তাদের ভালো থাকার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, এনায়েতবাজার মহিলা কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া হোসাইন আনিকার সাথে তিনবছর আগে পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক হয় কাতারে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ফার্মে কর্মরত তারেকুল ইসলামের (২৮)। তারেকের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম কধুরখীল গ্রামে। তিনি রেয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের ছেলে।

অন্যদিকে সাদিয়া হোসাইন আনিকা রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া কচুখাইন গ্রামের হোসাইন আহমেদের মেয়ে। নগরীর এস এস খালেদ রোডে তাদের বাসা। আনোয়ারা তালসরা দরবার শরীফের পীর আহমদ ছাফার মেয়ের ঘরের নাতনি আনিকা। আনিকার মা’র নাম শামসুন্নাহার।

সাদিয়া হোসাইন আনিকা বলেন, শুরু থেকেই আমাদের প্রেমের সম্পর্কটি আমার পরিবার মেনে নিতে পারেনি। তারা বরাবরই তারেককে ভুলে যাওয়ার জন্য আমার উপর চাপ সৃষ্টি করতো। কিন্ত তাকে ভোলা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ নিয়ে আমার উপর অসংখ্যবার শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। সম্প্রতি তারেক দেশে আসার পর স্বাভাবিকভাবে আমি তার সাথে লুকিয়ে দেখা করি। এ কারণে আমার উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়। তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে একপর্যায়ে আমি তারেকের হাত ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। গত ১২ নভেম্বর ইসলামী শরাশরিয়ত ও কাবিননামামূলে আমরা বিয়ে করি।’‌

আনিকা বলেন, ‘‌বছরখানেক পর আরেকটু প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারেক বিয়ের কাজটা সারতে চেয়েছিল। কিন্ত আমিই তাকে অনেকটা বাধ্য করি বিয়ে করতে। আমরা বেশ ভালো ও সুখে আছি। কিন্ত আমাদের ভালো থাকার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার বাবা-মা ও মামারা। তারা অর্থের জোর খাটিয়ে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও আমাদের হয়রানি করছে। আমার ভাশুর নুরুল আমিন ও আমার স্বামীর বন্ধু বদিউল আলমকে বাড়ি থেকে তুলে এনে থানা হাজতে নির্যাতন চালাচ্ছে।

নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এক ভদ্রলোকের মেয়ে নিখোঁজ আছে। বলা হচ্ছে, আমিনের ছোট ভাই তাকে নিয়ে গেছে। আমিন ও তার পরিবারের আরও কয়েকজনের সাথে আমি নিজে কথা বলেছি। তাদেরকে বার বার বলেছি, একটা ঝামেলা হয়েছে যতটুকু পারেন আমাদেরকে হেল্প করেন। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখেছি যে, ওই ছেলেটা আমিনের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে কথা বলতেছে। এই তথ্যটা আমি আমিনকে বলেছি যে, আপনারা জানেন, তবুও পুলিশকে হেল্প করছেন না। পরে আমি সজলকে দিয়ে আমিনকে নিয়ে এসেছি। সে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। বুধবার সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘তাদেরকে বার বার বলেছিলাম, আমাদেরকে হেল্প করুন। তারা উপযুক্ত ছেলে-মেয়ে। পুলিশের কাছে আসলে কোন সমস্যা হবে না। না হয় আদালতে যাক তারা। তাহলে তো ব্যাপারটা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তারা পুলিশের সাথে চোর-পুলিশ খেলে। যাদের মেয়ে গেছে, তাদের তো চিন্তা-টেনশন হয়। মেয়েটা কেমন আছে, কী করছে, আদৌ বেঁচে অাছে কিনা।’

আমিনকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি বলেও দাবি করেন নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারি কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম।

জানা যায়, নুরুল আমিন ও বদিউল আলমকে ধরার প্রায় ২৮ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার রাত ৭টার দিকে কোতোয়ালী থানায় একটি অপহরণ মামলা রুজু করে সাদিয়া হোসাইন আনিকার পরিবার। মামলায় আনিকার স্বামী তারেকুল ইসলাম, বড়ভাই নুরুল আমিন, স্বামীর বন্ধু বদিউল আলমসহ কয়েকজনকে আসামী দেখানো হয়েছে।